ভারতীয় সেলফোন অপারেটর ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়া এবং রাষ্ট্রীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের (বিএসএনএল) বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছে রিলায়েন্স জিও ইনফোকম। জিওর দাবি, ল্যান্ডলাইন নম্বরগুলোকে মোবাইল নম্বরে রূপ দিয়ে ঠকিয়ে ইন্টারকানেক্ট রাজস্ব আয় করেছে প্রতিষ্ঠান তিনটি। তাই টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (টিআরএআই) কাছে অবিলম্বে তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় অংকের জরিমানা ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে জিও। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ভারতী এয়ারটেলের পক্ষ থেকে জিওর সব
দাবি নাকচ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য,
মুকেশ আম্বানির টেলিযোগাযোগ কোম্পানি টিআরএআইকে
ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছে,
যাতে ইন্টারকানেক্ট ইউজেস চার্জ নিয়ে আলোচনা সফল
না হয়।
সম্প্রতি নিজেদের অভিযোগ জানিয়ে
টিআরএআইয়ের চেয়ারম্যান আরএস শর্মাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে জিও। এতে ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়া এবং
বিএসএনএলের বিরুদ্ধে বেশকিছু নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে। জিওর দাবি, টেলিযোগাযোগ
প্রতিষ্ঠান তিনটির কারণে জিও এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকশ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে।
তার পরও রাষ্ট্রীয় দপ্তরে নিজেদের লোকসানে থাকার তথ্য দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।
রিলায়েন্স জিওর দাবি, তারা
পুরনো অপারেটরগুলোর এমন প্রতারণামূলক কার্যক্রমের কারণে জিওর নেটওয়ার্ক ব্যবহার
করে প্রতি আউটগোয়িং কলের ক্ষেত্রে দশমিক ৫৮ রুপি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ
ধরনের কলের ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে দশমিক ৫২ রুপি রাজস্ব হারানোর দাবি জানানো
হয়েছে। এর ফলে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের লোকসান আরো বেশি। পুরনো অপারেটরগুলোর এ
ধরনের প্রতারণামূলক হাজার হাজার নম্বর চালু রয়েছে। টিআরএআইয়ের কাছে পুরনো অপারেটরগুলোর
চালু থাকা এ ধরনের নম্বরের একটি তালিকাও সরবরাহ করেছে জিও।
ভারতী এয়ারটেল জিওর সব অভিযোগ
অস্বীকার করলেও ভোডাফোন-আইডিয়া লিমিটেড এবং বিএসএনএলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা
হয়নি।
ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়া লিমিটেড
এবং বিএসএনএলের বিরুদ্ধে জিওর প্রতারণার অভিযোগ এটিই প্রথম নয়। এর আগেও তিন
অপারেটরের বিরুদ্ধে লাইসেন্স ফিতে বড় রকমের অনিয়মের অভিযোগ এনেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৭ সালের মে মাসে এমন অভিযোগ তুলে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি চেয়েছিল
জিও। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সরকারকে ৪০০ কোটি টাকা কম লাইসেন্স ফি
পরিশোধের অভিযোগ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে পুরনো অপারেটরগুলোর লাইসেন্স বাতিল
করার দাবি জানিয়েছিল জিও।
টিআরএআইকে দেয়া চিঠিতে ওই সময় জিও
জানিয়েছিল, ভারতের বৃহৎ তিন অপারেটরের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করা হোক। কারণ
অপারেটরগুলো ইচ্ছে করে কম লাইসেন্স ফি জমা দিয়েছে, যা লাইসেন্স নিয়মবহির্ভূত। এখনই
ব্যবস্থা না নিলে এটা একটা বাজে উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে।
সম্প্রতি নতুন নিয়ম চালু করেছে জিও।
এর ফলে জিওর গ্রাহকরা অন্য নেটওয়ার্কে ফোন করলে প্রতি মিনিটে খরচ হবে অতিরিক্ত ছয়
পয়সা। এ নিয়ম জারির পর থেকে টুইটারসহ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় জিওকে নিয়ে
সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরপরই গ্রাহকদের সুবিধার্থে জিও নিয়ে এসেছে বিনা মূল্যে ৩০
মিনিটের টকটাইম অফার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব
জিও গ্রাহক ১০ অক্টোবরের পর নতুন সংযোগ নিয়েছেন, তারা প্রতিদিন ৩০ মিনিট বিনা মূল্যে
কথা বলার অফার এসএমএস মাধ্যমে পাবেন। ৩০ মিনিটের বিনা মূল্যের কলিং সুবিধা বৈধ
থাকবে এক সপ্তাহ। এটি প্রতিষ্ঠানটির ওয়ান-টাইম অফার। অর্থাৎ রিচার্জের পর সাতদিনের মধ্যে ৩০ মিনিট বিনা মূল্যে
অন্য নেটওয়ার্কে কথা বলতে পারবেন।
জিওর অফারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে
এয়ারটেল প্রচারণা শুরু করেছে যে তাদের গ্রাহকদের অন্য নেটওয়ার্কে কল করার ক্ষেত্রে
৬ পয়সা মূল্য পরিশোধের কোনো গল্প নেই। যেসব এয়ারটেল গ্রাহক ৯ অক্টোবরের আগে
রিচার্জ করেছেন ও সংযোগ নিয়েছেন,
তারা নতুন নিয়মের অধীনে পড়বে না।