অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দারিদ্র্য দূরীকরণে আমূল ভাবনা

ড. মোহাম্মাদ দুলাল মিয়া

সুইডিশ রয়্যাল একাডেমি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার-২০১৯ ঘোষণা করে ১৪ অক্টোবর। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি, তার সহধর্মিণী ফ্রান্স বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ এস্তার দুফলো হার্ভার্ডের অধ্যাপক মাইকেল ক্রেমারকে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। অভিজিৎ-দুফলো দম্পতি আমেরিকার বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক। দম্পতির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আব্দুল লতিফ জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব তাদের নোবেল পুরস্কার প্রদানে এটাই প্রতীয়মান হয় যে দারিদ্র্য এখনো বিশ্বের মূল সমস্যাগুলোর অন্যতম।

তবে ২০১৯ সালের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার অন্য কারণেও বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের সূচনা হয় ১৯৬৯ সালে, আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগে। এই ৫০ বছরে মাত্র দুজন নারী অর্থনীতিবিদ সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হন। এর আগে ২০১০ সালে মার্কিন অধ্যাপক এলিনর অসট্রম অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি দেখিয়েছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অথবা সমাজ বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন সম্পদের কীভাবে সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়। তবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে এস্তার দুফলোই সর্বকনিষ্ঠ।

নোবেল কমিটি তাদের বিবেচনার সপক্ষে বেশকিছু বাস্তবিক যুক্তি তুলে ধরে। তার মধ্যে প্রথম প্রধান হচ্ছে যে ত্রয়ীর গবেষণার ফল দারিদ্র্য নিরসনে রাষ্ট্র বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যারা দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। গত দুই দশকে তাদের গবেষণার ফল উন্নয়ন অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে অভিহিত করা হয়।

দারিদ্র্য নিরসনে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কার্যক্রম কয়েক দশক ধরে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও প্রকৃত অবস্থার উন্নয়নে বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিশ্বব্যাংকের ভাষ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-দশমাংশ (প্রায় ৭৫ কোটি) লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যারা দৈনিক মাত্র দশমিক মার্কিন ডলারে জীবন যাপন করে। তাদের অর্ধেকেরও বেশি (প্রায় ৪১ কোটি) বাস করে সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে অতিদারিদ্র্যের হার কমলেও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, যা সত্যিই আশঙ্কাজনক। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫০ লাখ শিশু মারা যায় এমন সব রোগে, যা স্বল্প ব্যয়ের চিকিৎসা দ্বারা প্রতিরোধ বা নিরাময় করা সম্ভব। তদুপরি বিশ্বের অর্ধেক শিশু এখনো প্রাথমিক সাক্ষরতা গণিতের কোনো রকম দক্ষতা ছাড়াই বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায়। পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে দারিদ্র্য এখনো বিশ্বের একটি প্রধান সমস্যা। মাইকেল ক্রেমার তার সহকর্মীদের গবেষণার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল কীভাবে অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। যদিও ভাবনা অর্থনীতিতে নতুন কিছু নয়, তবে তাদের গবেষণা চিরাচরিত পদ্ধতির চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন।

দারিদ্র্য নিরসনে আন্তর্জাতিক সংস্থার (যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ) পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাদের শ্রম সম্পদ দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে দারিদ্র্য নিরসনে সফলতার হার তুলনামূলকভাবে কম, সেটা উপরের পরিসংখ্যানই বলে দেয়। নোবেলজয়ী ত্রয়ী অর্থনীতিবিদ সমস্যার মূল কারণ অনুসন্ধানে পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, দারিদ্র্যকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে প্রথাগত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে দারিদ্র্যের মধ্যে মিশে গিয়ে তাদের প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে হবে। তার জন্য দরকার পর্যাপ্ত সময়ের। সেই নিমিত্তে তাদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে আব্দুল লতিফ জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব। ল্যাবের মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন