ইউনিসেফের জরিপের তথ্যমতে, স্কুলগামীদের এখনো ১৮ শতাংশ রোগা-পাতলা। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, কমেছে দারিদ্র্যও। তার পরও জনসংখ্যার একটা বড় অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, তারা রোগা-পাতলা। সুস্থ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরিতে পুষ্টিহীনতা মারাত্মক চ্যালেঞ্জ, যা খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। একসময় খাদ্যনিরাপত্তার অর্থ ছিল জনসংখ্যা অনুপাতে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুদ থাকা। কিন্তু বর্তমানে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সংজ্ঞানুসারে খাদ্যনিরাপত্তা হলো দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ, পুষ্টিকর, পছন্দমাফিক ও প্রয়োজনীয় খাবার যথেষ্ট পরিমাণে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার নিশ্চয়তা। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে। পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা এখনো উচ্চমাত্রার পুষ্টিহীনতার শিকার। প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশুদের রয়েছে ভিটামিন এ ও জিঙ্কের অভাব এবং নারীরা আয়োডিনস্বল্পতায় ভুগছেন। শহরের বস্তিতে পুষ্টি পরিস্থিতি খুব নাজুক। গ্রামের অবস্থাও খুব ভালো নয়। বস্তির অধিকাংশ শিশু খর্বকায়।
উন্নত দেশগুলোর মতো প্রকট না হলেও বর্তমানে শিশুদের স্থূলতা নতুন বিড়ম্বনা তৈরি করছে। স্থূলতার কারণে শিশু-কিশোররা শারীরিক ও মানসিক নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এখন অপুষ্টির পাশাপাশি শিশুদের স্থূলতা সমস্যার প্রতিও আমাদের গুরুত্বারোপ করতে হবে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। প্রত্যাশিত বিকাশের জন্য অভিভাবকদেরই সতর্ক থাকতে হবে। বলা আবশ্যক, মায়েদের মধ্যে স্থূলতার বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে এ জরিপ কাজে লাগবে। একই সঙ্গে বলা প্রয়োজন, স্কুলের শিক্ষকরাও শিশুদের স্থূলতা কমাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের স্কুল হেলথ কর্মসূচি আরো জোরদার করা প্রয়োজন। স্কুলে মিড ডে মিল চালু করলে শিশুদের শাকসবজিসহ পুষ্টিকর খাবারে অভ্যস্ত করে তোলাও সম্ভব।
জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতেও পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পুষ্টিহীনতার কারণে হ্রাস পায় কর্মশক্তি ও কর্মোদ্যম। জন্মগ্রহণ করে খর্বকায় প্রতিবন্ধী শিশু। বিঘ্নিত হয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি। এ প্রেক্ষাপটে পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী অপুষ্টি রোধে সঠিক নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা গ্রহণ করতে হবে। পুষ্টিসম্মত খাদ্য গ্রহণে গড়ে তুলতে হবে জাতীয়ভিত্তিক সচেতনতা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইউনিসেফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সংগঠনগুলো শিশুর খর্বতা সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে। তাদের বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি, সম্প্রসারিত পুষ্টি কার্যক্রম, মানসম্মত খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করা। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশ থেকে অপুষ্টি দূর করতে হবে। আর ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুর খর্বতা ও স্বাস্থ্য ক্ষয় রোধে আন্তর্জাতিকভাবে সব লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। খর্বাকৃতির জন্য শিশুরা কোনোভাবেই দায়ী নয়। বর্তমান শিশুবান্ধব সরকার শিশুদের কল্যাণে প্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন রকম কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দুস্থ, অসহায়, মাতৃ-পিতৃহীন ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিরাপত্তা কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি সুস্থ, নিরাপদ ও কর্মমুখী জীবন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের নিজস্ব উদ্যোগ, জাতিসংঘ শিশু তহবিল ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় সব শিশুকে পুষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে। এ কার্যক্রম সফল করতে পারলে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা যাবে এবং খর্বকায় শিশুর সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে।
শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খাদ্যনিরাপত্তার স্বার্থে আরো ব্যাপক পুষ্টি কর্মসূচি চালু করা উচিত। আশার কথা হচ্ছে, সরকার দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে
- ভেতর থেকেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার প্রয়োজন
- প্রবাসী আয় বাড়িয়ে যেভাবে রিজার্ভ সংকট কমানো যেত
- স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সচেতনতা বাড়াতে হবে
- সিটি ব্যাংক এমডি মাসরুর আরেফিনের জবাব
- একজন শেয়ারহোল্ডারের বক্তব্য
- ‘আমি দৃষ্টিশক্তি হারালেও চলার পথ হারাইনি’