বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ ছাড়া প্রায় সবই জিতেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এবার গোলের অনন্য এক মাইলফলকেও পৌঁছে গেলেন তিনি। ইউরো বাছাই পর্বে সোমবার ইউক্রেনের বিপক্ষে এক গোল করার মধ্য দিয়ে তিনি নাম লেখালেন অভিজাত ‘৭০০’ গোলের ক্লাবে। যদিও এদিন ১-২ গোলে হেরে গেছে তার পর্তুগাল।
৭০০তম গোলটি পেনাল্টি থেকে পান রোনালদো। এ গোলে মাইলফলকে পৌঁছে গেলেও দলের হার এড়াতে পারেননি। ৯৭৩ ম্যাচে ৭০০ গোল পেলেন জুভেন্টাসের ৩৪ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। এসব ম্যাচের অন্তত ৪৫৮টিতে তিনি ন্যূনতম এক গোল করেছেন।
পরশুর গোলটি তার পর্তুগালের জার্সিতে ৯৫তম। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার চেয়ে বেশি গোল করেছেন শুধুই ইরানি গ্রেট আলি দায়েই, যার গোলসংখ্যা ১০৯।
ক্যারিয়ারে রোনালদোর চেয়ে বেশি গোল করেছেন জার্ড মুলার, ফেরেঙ্ক পুসকাস, পেলে, রোমারিও ও জোসেফ বাইকান। এর মধ্যে চেক-অস্ট্রিয়ান বাইকান করেছেন সর্বোচ্চ ৮০৫ গোল। ৭৭২ গোল নিয়ে তার পরেই ব্রাজিলিয়ান গ্রেট রোমারিও। ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় বিবেচিত পেলে ৭৬৭ গোল নিয়ে রয়েছেন তালিকার তিন নম্বরে। এছাড়া হাঙ্গেরির গ্রেট ফেরেঙ্ক পুসকাস ৭৪৬ গোল ও জার্মান গ্রেট জার্ড মুলার ৭৩৫ গোল করেছেন।
রোনালদোর গোলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। মাদ্রিদ জায়ান্টদের জার্সিতে ৪৫০ গোল করেছেন তিনি। রিয়ালকে জিতিয়েছেন চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। এছাড়া ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে করেছেন ১১৮ গোল। জাতীয় দলের হয়ে তার করা ৯৫ গোলের অর্ধেকও নেই কারো। ৪৭ গোল নিয়ে পলেতা রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে রোনালদোর প্রিয় শিকার অ্যান্ডোরা, আর্মেনিয়া, লাটভিয়া ও সুইডেন। এসব দলের প্রত্যেকের বিপক্ষে অন্তত পাঁচটি করে গোল রয়েছে তার। এছাড়া চারটি করে গোল করেছেন এস্তোনিয়া, ফারো আইল্যান্ডস, হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। তবে কখনই গোল করতে পারেননি ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
ক্লাব পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৭ গোল করেছেন সেভিয়ার বিপক্ষে। এছাড়া অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের জালে ২৫টি, গেটাফের জালে ২৩টি ও বার্সেলোনার জালে ১৮টি গোল করেছেন এ গোলমেশিন।
রেকর্ড ভাঙা আর গড়াই যেন রোনালদোর নেশা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে বেশি গোল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি, পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ এবং আরো কত কি! এ তালিকা যেন অনিঃশেষ!
ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনার লিওনেল মেসির সঙ্গে তার লড়াইটা বিশ্ব ফুটবলের এক অনুপম সৌন্দর্য। আজ রোনালদো এগিয়ে যান তো কাল মেসি। এভাবেই চলছে দুজনের রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ। ক্লাব ফুটবলে রোনালদোর গোল ৬০৫, মেসির ৬০৩। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে দুজনেরই গোলসংখ্যা ৪১৯টি করে। পর্তুগালের স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে করা তিন গোল যোগ করলে রোনালদোই এগিয়ে থাকবেন। তবে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে পর্তুগিজ লিগ না পড়ায় ওই তিন গোল যোগ হচ্ছে না।
পুসকাস ও আলফ্রেডো ডি স্টেফানো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে করেছেন সমান সাত গোল। এ দুজনকে টপকে যেতে রোনালদোর এখনো প্রয়োজন চার গোল। রায়ান গিগস চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা ১৬ মৌসুমে গোল করেছেন, যে রেকর্ডটি স্পর্শ করতে আগামী মৌসুমেও গোল পেতে হবে ‘সিআরসেভেন’কে। ৩৪ বছর বয়সেও রোনালদো যে অনবদ্য ফর্মে আছেন, তাতে আরো অনেক রেকর্ড যে তার কাছে ধরা দেবে, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বিবিসি