দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এক দম্পতির লড়াই

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুই দশক ধরে সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দম্পতি বোঝার চেষ্টা করে আসছিলেন দারিদ্র্যপীড়িতদের জগৎ, তাদের জটিলতা ব্যাপকতার দুনিয়া। বর্তমানে বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান দারিদ্র্য নিয়ে বোঝাপড়া বাড়িয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াইকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করেছে।

গত সোমবার হার্ভার্ড গবেষক মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে যৌথভাবে অর্থনীতিতে নোবেল জিতলেন ৫৮ বছর বয়সী অভিজিৎ ব্যানার্জি ৪৬ বছর বয়সী এস্তার দুফলো। বৈশ্বিক দারিদ্র্য নিরসনের উপায় অনুসন্ধানে পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তারা জিতলেন এবারের নোবেল। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বিশ্বের প্রায় ৭০ কোটি মানুষ তীব্র দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে।

ব্যানার্জি দুফলোউভয়ই ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক এবং দ্বিতীয় নারী হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল জিতলেন দুফলো।

ব্যানার্জির জন্ম ভারতে আর প্যারিসে জন্ম নেয়া দুফলো সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই দুনিয়ায় বড় হয়েছেন।

এস্তার দুফলো ছয় বছর বয়সে মাদার তেরেসা নামে একটি কমিক বই পড়েন, যেখানে কলকাতার একটি চিত্র তার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। শিশুদের জন্য লেখা ওই কমিক বইয়ে লেখা হয়েছিল, সাবেক ব্রিটিশ ভারতের রাজধানীটি এতই জনাকীর্ণ যে সেখানে প্রত্যেক বাসিন্দা মাত্র ১০ বর্গফুট জায়গা পান। ২৪ বছর বয়সে এমআইটির গ্র্যাজুয়েট ছাত্র হিসেবে যখন শহরটিতে প্রথম আসেন, তখন তিনি দেখেন গাছপালা, খালি সাইডওয়াক এবং কমিক বইয়ে লেখা দুর্দশার প্রতিচ্ছবি সেখানে ছিল না।

অন্যদিকে ছয় বছর বয়সেই অভিজিৎ জানতেন দরিদ্র মানুষগুলো কোথায় বসবাস করে। তার বাড়ির পেছনেই থাকা বস্তির ছোট ছোট খুপরিতে বাস করত তারা। ওখানকার শিশুদের হাতে মনে হয় ঢের সময় এবং যেকোনো খেলায় তাকে হারিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখত তারা। মার্বেল খেলায় তাদের হাতে নিয়মিত মার্বেল হারানো নিয়ে তাদের প্রতি বেশ ঈর্ষান্বিত অনুভব করতেন।

ব্যানার্জি দুফলো একত্রেপুওর ইকোনমিকস: অ্যা র্যাডিক্যাল রিথিংকিং অব দ্য ওয়ে টু ফাইট গ্লোবাল পভার্টিনামে গবেষণা গ্রন্থ লিখেছেন। বইয়ে তারা দরিদ্র মানুষের বাজারভিত্তিক ভাবনা তুলে ধরে দারিদ্র্য দূর করার নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন।

১০ অধ্যায়বিশিষ্ট গবেষণা গ্রন্থে তারা বলেছেন, বৈশ্বিক দারিদ্র্যকে একটিমাত্র নিরাকার সমস্যা হিসেবে দেখলে হবে না, বরং অনেকগুলো বিযুক্ত সমস্যার ফলাফলই দারিদ্র্য। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন দারিদ্র্যের ফাঁদ রয়েছে। তবে নোবেলজয়ী বাঙালি দম্পতি মনে করেন ফাঁদ সেখানেই আছে, যেখানে আয় বা সম্পদ বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সেখানে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। কিন্তু যাদের বিনিয়োগ করার সামর্থ্য আছে, সেখানে অনেক বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। অন্যদিকে যখন দরিদ্রদের দ্রুত উন্নতি শুরু হয় এবং কিছু লোক দ্রুত ধনী হয়ে ওঠে, সেখানে দারিদ্র্যের কোনো ফাঁদ থাকে না।

গবেষকদ্বয় লিখেছেন, খাদ্য পুষ্টির অভাব মানুষকে দীর্ঘকাল দরিদ্র করে রাখে। যে শিশুটি পুষ্টিহীনতায় জন্ম নেয় এবং জন্মের পরও পুষ্টিহীনতায় ভোগে, সে পড়াশোনায় খুব একটা ভালো করতে পারে না। ফলে কর্মজীবনেও সে সফল হয় না এবং খুবই কম মজুরি পায়। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিন যুবকদের কৃমিনাশক ওষুধ সরবরাহ করা যেতে পারে। অনেক দরিদ্র না খেয়ে থাকলেও তা বলতে চায় না। তবে সবার মতোই তারা জীবনের বিরক্তি দূর করতে টিভি, মোবাইল ফোন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করে। কিন্তু তারা কম পুষ্টির সস্তা খাবার খায়। শিশুদের পুষ্টির পেছনে যে ব্যয় হবে, ওই শিশু বড় হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করার আগে এর সুফল পাওয়া যাবে না, তবু এটিই করা জরুরি।

দরিদ্রদের শিক্ষা নিয়ে ওই গবেষণা গ্রন্থে বলা হয়েছে,

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন