২০২০ সালে বৈশ্বিক মন্দা হবে কিনা, তার সম্ভাব্য কারণ ও এর বিপরীত চিত্র:
উদ্বেগের কারণ—
বাণিজ্যযুদ্ধ:
মার্কিন - চীন বাণিজ্যযুদ্ধ
এরই মধ্যে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে চাপে ফেলেছে। তবে চীন আরো মার্কিন কৃষিপণ্য কিনতে সম্মত
হওয়ায় এবং হোয়াইট হাউজ আরেক দফা শুল্কারোপ স্থগিত রাখায় কিছুটা সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
কিন্তু এখনো সবচেয়ে বিতর্কিত বিরোধগুলোর সমাধান হয়নি, আবার
কিছু শুল্কও বহাল রয়েছে। ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর ওপর ট্রাম্পের শুল্কারোপের
হুমকিও রয়েছে ।
অস্থির ম্যানুফ্যাকচারিং: বৈশ্বিক
ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রম টানা পাঁচ মাস সংকুচিত হয়েছে। গাড়ি খাত নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ
রয়েছে, যা
রফতানিনির্ভর জার্মান ও জাপানি অর্থনীতির বড় মাথাব্যথার কারণ। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা হারাচ্ছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে মার্কিন নন-রেসিডেন্সিয়াল বিনিয়োগও তিন বছরের
মধ্যে প্রথমবার সংকুচিত হয়েছে।
ভূরাজনীতি:
এ
মুহূর্তে বিশ্বে বেশকিছু ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন সংঘাতের পাশাপাশি ব্রেক্সিট
চুক্তি নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চলছে দ্বৈরথ। এছাড়া আছে সৌদি আরবের
তেল স্থাপনায় হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান
দ্বন্দ্ব, ইরাকে
সহিংসতায় রূপ নেয়া বিক্ষোভ,
তুরস্কের সিরিয়ায় আক্রমণ ও হংকংয়ের দীর্ঘমেয়াদি বিক্ষোভ।
এর বাইরে লাতিন আমেরিকারও রয়েছে নিজস্ব দ্বন্দ্ব। আরেকটি আর্থিক সংকটের মুখে থাকা আর্জেন্টিনায়
হয়তো বাজারবান্ধব সরকারের উচ্ছেদ ঘটতে পারে। একুয়েডর, পেরু
ও ভেনিজুয়েলা—প্রতিটিরই
রাজনৈতিক সমস্যা রয়েছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই অভিশংসন তদন্তের মুখে আছেন ট্রাম্প।
মুনাফা সংকোচন:
দ্বিতীয়
প্রান্তিকে হোঁচট খেয়েছে বৈশ্বিক মুনাফা প্রবৃদ্ধি। হতাশাগ্রস্ত ব্যবসা আস্থার কারণে
বিশ্বজুড়ে মূলধন ব্যয় সংকুচিত হচ্ছে। আয় হ্রাসের পেছনে রয়েছে শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান
মজুরি, উৎপাদনশীলতার নিষ্প্রভ প্রবৃদ্ধি ও দুর্বল দাম। উদ্বেগের
বিষয় হলো পরবর্তী সময়ে কম মুনাফায় থাকা করপোরেশনগুলো শ্রমশক্তি ছাঁটাই, ভোক্তা
আস্থায় আঘাত ও সম্ভাব্য ফাঁক খোঁজায় অর্থ ব্যয় করবে।
নিষ্পেষিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক:
বছর
শুরুর তুলনায় মুদ্রানীতি হয়তো শিথিল হবে,
কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর যথেষ্ট ‘গোলাবারুদের’ ঘাটতি রয়েছে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয়তা
প্রয়োজনের চেয়ে অনেক মন্থর। চলতি বছর এখনো প্রত্যাশিত হারে সুদহার কমায়নি ফেড। ইউরোপীয়
কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) ও ব্যাংক
অব জাপান (বিওজে) এরই মধ্যে
ঋণাত্মক সুদহারে আছে। ব্যাংকগুলোর সীমা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সরকারের অনীহা:
বাজেট
প্রশমনের জন্য সরকারগুলোকে নিয়মিত আহ্বান জানানো সংস্থাগুলোর একটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা
তহবিল (আইএমএফ)।
কিন্তু রাজস্ব নীতিগুলো যে কার্যকর না হয়ে, প্রতিক্রিয়াশীল
হবে, তার আভাস
দেখা যাচ্ছে। মার্কিন ব্যাংক মরগান স্ট্যানলির প্রাক্কলন অনুসারে, চলতি
বছর প্রধান অর্থনীতিগুলোর প্রাথমিক রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে জিডিপির ৩ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত
বছর ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং আগামী বছর তা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বের কিছু সরকার ব্যয় বাড়িয়েছে,
কিন্তু চীন ও জার্মানি যথেষ্ট সুযোগ সত্ত্বেও ব্যয়ের
রাশ টেনে রেখেছে এবং জাপান সম্প্রতি বিক্রয় কর বাড়িয়েছে।
স্বস্তির কারণ—
যুক্তরাষ্ট্র:
ব্লুমবাগ
ইকোনমিকসের তৈরি একটি মডেল অনুসারে,
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের মন্দা ঝুঁকি মাত্র ২৫ শতাংশ।
আর বিশ্বের শীর্ষ বৃহৎ
অর্থনীতিটি যদি দাঁড়িয়ে থাকে,
তবে বাকিদের সমস্যাও দূর করতে সহায়ক হবে। এছাড়া যে
স্থবিরতা মন্দা প্রায় নিশ্চিত করে,
তা দূর হওয়ার এখনো আশা রয়েছে। অন্য দেশের তুলনায়
যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি আবদ্ধ একটি অর্থনীতি,
যার অর্থ বৈশ্বিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এর সম্প্রসারণ
অব্যাহত থাকতে পারে।
নিয়োগের জোয়ার:
মার্কিন
ভোক্তারা মূলত প্রবৃদ্ধি ভিত্তির একটি অংশ,
কারণ বেকারত্বের হার পাঁচ দশকের সর্বনিম্নে আছে।
বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও শক্তিশালী নিয়োগ সহায়ক হয়ে উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর
সক্রিয়তা: চলতি
বছর দুই দফা সুদহার কমিয়েছে ফেড এবং চলতি মাসে আরেক দফা কমাতে পারে। ইসিবিও আমানত হার
শূন্যের নিচে নামিয়েছে এবং বন্ড কেনা কর্মসূচি আবার শুরু করেছে, বিওজেও
আরো বেশি প্রণোদনার কথা ভাবছে। কেবল এ ব্যাংকগুলোই নয় ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ
কোরিয়া, দক্ষিণ
আফ্রিকা ও ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার কমাচ্ছে। মুদ্রানীতি কাজ করতে কিছু
সময় নেয়, তবে
একই সঙ্গে কিছু উপকারিতাও রয়েছে।
চীন: আগের পতনগুলোয় উদ্ধারে ত্বরিত পদক্ষেপ নিলেও এখন হয়তো এমন কিছু করছে না চীন। এর কারণ এ ধরনের কোনো কিছু দেশটির ঋণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে। তবে চাইলে এখনো দেশটি এ বিকল্প পথ বেছে নিতে পারে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ