প্রাচীন ঢাকার গল্পকথা

হোমায়রা জামান

প্রায় ১০ বছর ধরে আমি আমার কর্মজীবনের একটি বড় অংশে ঢাকার ঐতিহাসিক এলাকা এবং স্থাপত্য সংস্কৃতি সংরক্ষণের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম। আমার কর্মযজ্ঞের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি নিবন্ধন উপস্থাপন করছি। প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যকলা বা রূপ বিশেষ একটা লিপিবদ্ধ নেই। তাই বিভিন্ন সময় পরিদর্শকদের লিখন, চিত্রকলা বা রাজকার্যে ব্যবহূত নথিপত্র থেকে তার রূপ ধারণা করা হয়। আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার আলোকে লেখায় ঢাকার প্রাক মোগল মোগল স্থপনার চিত্ররূপ তুলে ধরতে চেষ্টা করব। বর্তমানে ঢাকার কোথায় স্থাপনাগুলো আছে, তা বর্তমান মানচিত্রে দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ঢাকা শহরের বিস্তৃতি, ব্যাপ্তি বিস্তার আজ যে অনুপাতে নদীর অন্য পাড়ে হয়েছে, বুড়িগঙ্গাসহ পুরান ঢাকা, শহরের এক প্রান্ত থেকে এখন বেশ কিছুটা ভেতরে মনে হয়।

আবহমানকাল ধরে যে স্থাপত্য শিল্পের নমুনা আমরা দেখতে পাই, তা বেশির ভাগই আমাদের লোকজ সংস্কৃতি শৈলীর সাথে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সেই সময়ের শাসক শ্রেণীর অবস্থান প্রভাবেরই উদাহরণ। আর স্থাপনা বিশ্লেষণ করেই ইতিহাসবিদ বা গবেষকেরা সেই সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট ধারণ করেন। সাধারণভাবে আমরা স্থাপত্যের টাইমলাইন করতে নিদর্শনগুলো দিয়ে সেই সময়ের শক্তিধর বা প্রভাবশালীদের ধরে মাপকাঠি করি। আমি মাপকাঠি এবং ওই নিদর্শনগুলোর সূত্র ধরেই আমার লেখায় ঢাকায় অবস্থান এবং স্থাপত্যের চিত্র তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। প্রাচীনকাল থেকে ঔপনিবেশিক কাল পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার উত্তর পাড়ে সেই সময়ের ক্ষমতাশীল, বিত্তবান প্রভাবশালীদের অবস্থান দেখা যেত, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শহরের উন্নয়নের নীতি বা দৃষ্টিকোণ নদী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ফলে নদীর পাড় আজ ভরাট, দখল, দূষণ অপরিকল্পিত স্থাপনায় জর্জরিত।

ঢাকা তার ভৌগোলিক অবস্থান নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যই ঐতিহাসিকভাবে প্রশাসনিক অর্থনৈতিক গুরুত্ব পেয়েছে, যা কিনা ঢাকা শহরের আশপাশে উয়ারী বটেশ্বর (৪৫০ খিস্টপূর্ব), বিক্রমপুর (সেন সাম্রাজ্য) সোনারগাঁও (সুলাতানি আমল) থেকে আমরা জানতে পারি। প্রধানত কারুশিল্পের ওপর ভিত্তি করেই মানববসতিগুলো বুড়িগঙ্গা ধোলাই খালের মধ্যবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠে। ঢাকা তখন৫২ বাজার ৫৩ গলির শহরহিসেবেই পরিচিত ছিল। সময়ের সাথে সাথে কারুশিল্পের বিবর্তন বা হারিয়ে গেলেও কিছু কিছু এলাকায় নামগুলো আজো ব্যবহূত হয়। যেমন তাঁতিবাজার, সুতারনগর, গোয়লনগর, শাঁখারী বাজার ইত্যাদি। এলাকাগুলো থাকলেও সেই সমপ্রদায় বা কারুশিল্প কোনোটারই অস্তিত্ব নেই। এদের মধ্যে একমাত্র শাঁখারী বাজারেই আজো এই ঐতিহ্যবাহী সমপ্রদায় তিন-চার পুরুষ ধরে ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ধরে রেখেছে। প্রায় ১৪-১৬ ফুট চওড়া রাস্তার দুই পাশে বাড়িগুলো বেশির ভাগই ১২-১৫ ফুট প্রস্থ এবং ৮০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা। বাড়িগুলোর বিস্তারও প্রায় একই রকম। রাস্তার সম্মুখভাগে দোকান তারপর কারখানা, উঠোন, রান্নাঘর, আবার উঠান সবশেষে শৌচাগার এবং ওপরের তলায় শোয়ার ঘর। বাড়িঘরগুলোর তৃতীয় তলায় খোলা উঠানসহ মন্দির দেখা যায়। কালক্রমে কারখানা, রান্নাঘর শৌচাগার মধ্যবর্তী স্থানের উঠানগুলো বন্ধ করে স্থাপনা গড়ে উঠে স্বল্প বা সরু জায়গায় আমাদের আবহাওয়া জলবায়ু প্রতিক্রিয়াশীল অনন্য স্থাপত্যরীতি বিনষ্ট হয়। মজার ব্যাপার হলো, এলাকার ভবনগুলো একটু খতিয়ে দেখলে তাদের নির্মাণশৈলী, উপাদান স্থাপত্যশৈলী থেকে মোগল আমলের শেষ অংশ থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিক, প্রাগ-ঔপনিবেশিক এবং তার পরের বিবর্তনের নিদর্শন সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।

এই শাঁখারীবাজারসংলগ্ন তাঁতিবাজার ছিল বিখ্যাত মসলিন তাঁতী সম্প্রদায়ের এলাকা আজ যা কিনা

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন