এটি সত্য যে মুসলিম বিজয়ের শুরু থেকেই বাংলায় স্থাপত্যের অপ্রতুলতা ছিল না। প্রাপ্ত উৎস থেকে জানা যায়, বখতিয়ার খলজি তার বিজিত অঞ্চলজুড়ে মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকা নির্মাণ করেন। প্রথম দিককার অন্য সুলতানরাও তাকে অনুসরণ করেন এবং অসংখ্য ইমারত নির্মাণ করেন। বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যের কিছু কেন্দ্র রয়েছে। যেমন ছোট পান্ডুয়া (পশ্চিমবঙ্গের হুগলি), গৌড়, হযরত পান্ডুয়া, সোনারগাঁও, বারবাজার ও বাগেরহাট।
মুসলিম আক্রমণকারীরা বা বিজয়ীরা বাংলায় যখন আসেন, তখন তাদের স্থাপত্য ছিল খুবই উন্নত ও খুবই উচ্চমানের। এ এইচ দানীর ভাষায়, ‘মুসলিমরা নিজেদের ঐতিহ্য হিসেবে উন্নত সভ্যতা নিয়ে বাংলায় এসেছিলেন এবং তারা এসেছিলেন এ দেশে নিজেদের নতুন বাড়িঘর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। এই সভ্যতার বাহক, যাদের বেশির ভাগই তুর্কি, মধ্য এশিয়ায় জন্মভূমি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন এবং তারা এখানে এসেছিলেন অবৈধ অভিবাসী বা আগমনকারী হিসেবে নিজেদের জীবনের নতুন ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে।’ আগমনকারী সুলতানরা সঙ্গে করে অনেক স্থপতি, কারিগর ও কারুশিল্পী নিয়ে এসেছিলেন। পরন্তু এ দেশেরও একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প ইতিহাস ছিল। কাজেই এটি ছিল দেশী ও বিদেশী উভয় শিল্প ঐতিহ্যের একটি সম্মিলনের সময়। কিছু দেশীয় উপাদানের মধ্যে রয়েছে আনুভূমিক বিম ও লিন্টেল পদ্ধতির নির্মাণ, ইমারতের বাঁকানো কার্নিশ, কাদামাটির মসলা, পোড়ামাটির অলংকরণ, স্মৃতিস্তম্ভ-সংলগ্ন ট্যাংক, কুঁড়েঘর আকৃতির চালা প্রভৃতি। আর কিছু বিদেশী উপাদানের মধ্যে আছে খাঁজকাটা বা বাঁকানো নির্মাণ পদ্ধতি, উজ্জ্বল টাইলসের ব্যবহার, ইমারতে অভিলেখের (ইন্সক্রিপশন) ব্যবহার এবং দালানে জ্যামিতিক ও ফুলেল অলংকরণ প্রভৃতি। মসজিদ ও সমাধিসৌধগুলো এ দেশে অনেকটাই বহির্দেশীয় ছিল। ইসলামী স্থাপত্যের প্রধান কেন্দ্রগুলো নিম্নরূপে আলোচনা হতে পারে:
হুগলির ত্রিবেণীতে অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভগুলো (মনুমেন্টস) বাংলায় সবচেয়ে প্রাচীন (১৩ শতকের পরবর্তী অর্ধভাগ)। হুগলির ছোট পান্ডুয়ার ত্রিবেণীতে অবস্থিত জাফর খান গাজী (৬৯৬ হিজরি, ১২৯৬-৯৭ খ্রিস্টাব্দ) সম্পর্কিত মসজিদগুলো বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জাফর খান গাজীর মসজিদের সুনন্দ খিলানগুলো দেশীয় উপাদানের নমুনা। এ ধরনের খিলান পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের হযরত পান্ডুয়া??