রাজনৈতিক অনুপ্রবেশে ইমারত শৈলীর আগমন

ফাতিহা পলিন

যেকোনো অঞ্চলের সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল এর স্থাপত্য। বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের ভূপ্রকৃতির গঠন, আলো-বাতাসের চলাচল, মানুষের জীবনযাত্রার ধরন, জলবায়ু, নির্মাণসামগ্রী আর আমাদের বসবাসের অভ্যাসসবকিছুর সরল বহিঃপ্রকাশ এই স্থাপত্যধারা। এটাই বাংলাদেশের স্থাপত্য। এটা সত্য যে এই বোধ এক দিনে আসেনি। অনেকদিনের ব্যবহার আর অনুশীলনের ফলে এখন আমরা জোর গলায় বলতে পারি, এটা আমাদের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাস অনুসন্ধান অপেক্ষাকৃত নতুন; পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণের অনুপস্থিতিতে এককথায় বেশ দুরূহও বটে।

তাছাড়া, প্রচলিত ধারণামতে পলিমাটির এই অববাহিকার ভূমিরূপের গঠন নিকট অতীতে। তবে ভুলে গেলে চলবে না, অধিকাংশ ভূমি পাললিক হলেও, হাজার-লক্ষ বছরের প্রাচীন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, সিলেট, কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি, মধুপুর গড় উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্রভূমিও দেশেরই অন্তর্ভুক্ত। আপাতদৃষ্টিতে সমতটের এই দেশ, আসলে নানান ভূমিরূপে বৈচিত্র্যময়। দেশের আনাচকানাচে আজও লুকিয়ে আছে প্রাগৈতিহাসিক হাতিয়ার, স্তম্ভ, মূল্যবান প্রত্নবস্তু স্থাপনা। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে অনেক গবেষণা, অনুসন্ধান অথবা প্রবন্ধ-রচনা পাওয়া গেলেও ঐতিহাসিক কালের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্থাপত্যের ইতিহাস নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ কোনো প্রকাশনা আজও অনুপস্থিত। উদাহরণস্বরূপ বগুড়ার মহাস্থানগড়, নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর এবং পঞ্চগড়ের ভিতরগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা অঞ্চলের স্থাপত্য ইতিহাসের প্রাচীন অধ্যায় অধ্যয়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নিদর্শনগুলোকে কালের সূত্রে গেঁথে, পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার একান্ত অভাব। আর অভাববোধ থেকেই এই অনুসন্ধিত্সু প্রবন্ধের অবতারণা।

প্রাচীন যুগের স্থাপত্য

প্রায় ১০ হাজার বছর আগে, পৃথিবীতে যখন কৃষিকাজের সূচনা ঘটেছিল তখন থেকেই মানুষের স্থায়ী বসতি নির্মাণের শুরু। ধীরে ধীরে এই মানববসতি উন্নীত হয় মিসর, চীন, মেসোপটেমিয়া ভারতীয় উপমহাদেশের নগরসভ্যতায়, আনুমানিক হাজার বছর আগে। ধারণা করা হয়, মহাবীর আলেকজান্ডারের গঙ্গারিডি সভ্যতার গঙ্গে নগরী আসলে নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর। যদিও এর আগে ভারতের নদীয়ায় এর অবস্থান প্রমাণ করার যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে আমাদের সংস্কৃতি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো বলে দাবি করা যায়।

উয়ারী-বটেশ্বর

উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত রাস্তা, বিভিন্ন প্রত্নবস্তু এবং কালো মসৃণ মৃৎপাত্র বাংলাদেশ তো বটেই, এই উপমহাদেশের প্রাচীনকালের ইতিহাসের সন্ধান দেয়। অতএব বলা চলে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত প্রাচীন প্রত্নস্থান হিসেবে উয়ারী-বটেশ্বরই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। নানান তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে এটি বাংলা অঞ্চলের প্রাচীন ১২টি নগরের মধ্যে প্রথম এবং ভারতীয় উপমহাদেশের ৪১টি নগরের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচ্য। পরবর্তী সময়ে কার্বন-১৪ তারিখ নির্ণয় পরীক্ষার মাধ্যমে, এর সময়কাল দাঁড়ায় খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতক। কী আছে এই উয়ারী-বটেশ্বরে? আছে, সেই সময়ের একটি ঘরের ধসে পড়া মাটির দেয়ালের চিহ্ন। তাছাড়া পুরো এলাকাজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো ইট, মাটির নিচে নিয়মিত গাঁথুনির ইটের স্থাপত্য এবং দেয়াল আজও বিদ্যমান। নরসিংদীর বেলাব থানা সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের এই প্রত্নস্থলে প্রায় ৫০টি প্রত্নস্থান আবিষ্কৃত হয়েছে। কয়েক দফা উত্খননকার্য গবেষণায় একে একটি উল্লেখযোগ্য নদীবন্দর, বাণিজ্যকেন্দ্র স্বল্পমূল্যের পাথরের পুঁতি উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আরো উল্লেখ করা হয় যে এটি হলো মৌর্য সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমানা। কেউ কেউ একে টলেমির সৌনাগড়াও মনে করেন। এখানে উল্লেখ্য, বিভিন্ন প্রত্নস্থান আবিষ্কারের নেপথ্যে যেমন এক বা একাধিক ঢিবি আবিষ্কার অগ্রণী ভূমিকা

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন