প্রত্নস্থল বাগেরহাট

ড. একেএম শাহনাওয়াজ

বাগেরহাট প্রত্ন অঞ্চলকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত হয়েছে অনেক আগেই। এতে বাগেরহাটের ঐতিহ্যিক গুরুত্ব জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। বিশ্বজুড়ে সব সভ্য দেশই তাদের অতীত ঐতিহ্য যত্ন মমতার সঙ্গে সংরক্ষণ করে। সংরক্ষণ করে নিজেদেরই এগিয়ে নেয়ার জন্যআলোকিত করার জন্য। ঐতিহ্যিক প্রণোদনা বর্তমানকে বুঝতে সাহায্য করে, ভবিষ্যৎ নির্মাণ প্রচেষ্টাকে দেয় সহযোগিতা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বাগেরহাটের প্রত্ননিদর্শনসমূহ বিশেষ তাত্পর্য বহন করছে। বাগেরহাটে সংরক্ষিত স্থাপনার মধ্যে মসজিদ সমাধিই প্রধান। এসব নিদর্শন থেকে মুসলিম-পূর্ব যুগ সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নেয়া সম্ভব নয়। মধ্যযুগের প্রথম পর্ব অর্থাৎ স্বাধীন সুলতানি যুগের আঞ্চলিক ইতিহাস নির্মাণই শুধু নয়, বরং বাগেরহাট অঞ্চলের স্থাপত্যগুলো এর শৈলী বিচারে সুলতানি যুগপর্বেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। ফলে বর্তমান বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক গৌরবের আকর সূত্র হিসেবে বাগেরহাট অনেক বৈচিত্র্য স্থাপত্যিক ঐশ্বর্য নিয়ে উপস্থাপিত হতে পারে।

স্থাপত্যকলার বিবেচনায় খানজাহানের সময়ে গড়া ইমারতগুলোর বিশেষত্ব রয়েছে। এর মূল ধারণায় দিল্লির তুঘলক স্থাপত্যের প্রভাব থাকলেও সম্পূর্ণ নির্মাণশৈলীতে একটি স্বতন্ত্র রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যে কারণে অধ্যাপক দানী শৈলী বিবেচনায় বাগেরহাটের মধ্যযুগের ইমারতগুলোকেখানজাহানি রীতিবলে উল্লেখ করেছেন। বাংলার সুলতানি ইমারতের সাধারণ বৈশিষ্ট্য যেমন এখানে পাওয়া যায়, পাশাপাশি একটি নিজস্ব ঘরানার বিকাশ ঘটতেও দেখা যায়। কারণে বাগেরহাটের স্থাপত্য মূল্যায়ন করতে গেলে সুলতানি বাংলার স্থাপত্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় উপস্থাপন করতে হয়। যুগের ইমারত সাধারণত ইটে তৈরি। দেয়াল গড়া হয় দেড় থেকে চার মিটার পর্যন্ত পুরু করে। স্তম্ভ বা দেয়ালের প্লিন্থে কখনো কখনো পাথর বসানো হয়ে থাকে। কখনো কখনো ভেতরের খিলান বসানো হয় পাথরের স্তম্ভের উপর।

বহির্দেয়ালের চার কোণে থাকে চারটি বুরুজ। এগুলোর বেশির ভাগই গোলাকার অষ্টভুজাকৃতির হয়ে থাকে। বুরুজগুলো ছাদের সমান্তরালে গিয়ে শেষ হয়। এক বুরুজ থেকে অন্য বুরুজ পর্যন্ত টানা ছাদ ধনুকের মতো বাঁকা। গম্বুজগুলো একেবারেই স্থানীয় অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। অনেকটা উল্টানো পাত্রের মতো এবং নিরাভরণ। গম্বুজের বেশির ভাগই ত্রিকোণী পেনডেন্টিভের ওপর এবং কখনো কখনো স্কুইঞ্চের ওপর বসানো। ষাটগম্বুজের মতো বড় বড় ইমারতের অভ্যন্তরভাগে দ্বিকেন্দ্রিক সূচ্যগ্র খিলান বহনের জন্য পাথরের স্তম্ভ সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে। এর ফলে ভেতরটা খোলামেলা রাখা সম্ভব হয়। ইমারতের ভেতরে বাইরে আলংকারিক বন্ধনী পোড়ামাটির অলংকরণ থাকে। মসজিদগুলোতে পূর্বদিকের প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিমে সমসংখ্যক মিহরাব থাকে। খিলানাকৃতির মিহরাবে আয়তাকার ফ্রেম করে তা কারুকার্যমণ্ডিত করা হয়। এসব রীতির অনেকটাই ধারণ করেছে বাগেরহাটের ইমারত। আবার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও যুক্ত হয়েছে।

যেমন খানজাহানি রীতির কর্নার টাওয়ার বা কোনের বুরুজ অষ্টভুজাকৃতি না হয়ে হয় গোলাকৃতি। অনুমান করা যায়, কুঁড়েঘরে বাঁশের খুঁটি ব্যবহারের ধারণার মিশ্রণ আছে গোলাকার বুরুজ ব্যবহারে। বাঁশের খুঁটিতে যেমন কিছু পর পর গাঁট

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন