সমাধিসৌধ

ড. আসমা সিরাজউদ্দিন

সমাধিসৌধ স্থাপত্য কবরের ওপর নির্মিত একধরনের ইমারত। সংখ্যায় কম হলেও বাংলার সমাধি স্থাপত্যসমূহ প্রচলিত ইসলামী রীতি আঞ্চলিক ধারার মিশ্রণে বৈচিত্র্যপূর্ণ অবয়ব লাভ করেছে। তাসবিয়াতুল কুবুর অর্থাৎ কবরকে পার্শ্ববর্তী ভূমির উচ্চতায় নির্মাণ করার নির্দেশ হাদিসে থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য দেশের মতো বাংলায়ও কবরগুলোকে পার্শ্ববর্তী ভূমি থেকে উঁচু করা হয় এবং তা নির্মাণে ব্যবহার করা হয় ইট বা পাথর। এছাড়া সমাধি ঘিরে নির্মাণ করা হয় ইমারত। স্থাপত্যিক লিপিতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে প্রাক-মোগল মোগল যুগে তিন ধরনের ব্যক্তির কবরের উপরে সমাধিসৌধ নির্মাণ করা হতো। এরা হলেন বিজেতা অভিজাতবর্গ, সুফি-সাধক গাজী (ধর্মযুদ্ধে বিজয়ী) সমাহিত করাকে আরবিতে কবর দেয়া বলে। বাংলা সমাধি শব্দটি কবর বা স্মৃতিসৌধের বিপরীতে এবং ফারসি মাজার শব্দ কোনো উচ্চপদস্থ সম্মানিত ব্যক্তির সমাধি বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। দরগাহ কমপ্লেক্সসংলগ্ন অঞ্চলে কোনো সুফি বা গাজীর সমাধি থাকলে সাধারণভাবে তাকে বলা হয় দরগাহ। পবিত্র সমাধি হিসেবে ফারসি আস্তানা শব্দটিও বাংলায় অপ্রচলিত নয়। সমাধি লিপিতে সমাধির বিকল্প বেশকিছু শব্দ পাওয়া গেছে। যেমন মকবারা, তুরবা, কবর, গুণবাদ, রওজা ইত্যাদি।

বাংলার সমাধিগুলোকে দুটি কালানুক্রমিক যুগে ভাগ করা যায়: . সুলতানি বা প্রাক-মোগল যুগ এবং . মোগল যুগ। বাংলার অন্যান্য মুসলিম সৌধের মতোই প্রাক-মোগল যুগের সমাধিগুলোতে স্থানীয় নির্মাণরীতির প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু মোগল যুগে তা আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে। ফলে সময় বাংলার সমাধি নির্মাণে খাঁটি মোগলরীতির প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। সমাধিসৌধ থেকে বিযুক্ত বেশকিছু শিলালিপি পাওয়া গেলেও ঐতিহাসিক ঘটনার পারম্পর্য রক্ষা করে এসব লিপি অবলম্বনে ধারাবাহিকভাবে বাংলার সমাধি স্থাপত্য পর্যালোচনা করা সহজ নয়। লিপিতাত্ত্বিক প্রমাণ না পাওয়ার কারণে অনেক সমাধির নির্মাণ তারিখ বা সমাধিস্থ ব্যক্তি সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা যায় না। সাধারণত জনশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে কোনো সমাধিকে আনুমানিকভাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ গঠনকৌশল স্থাপত্যের নির্মাণশৈলী বিশ্লেষণ করে সমাধিসৌধকে অনেক বেশি নিশ্চয়তার সঙ্গে শনাক্ত করা সম্ভব।

বাংলায় বেশ কয়েকটি সমাধিসৌধ রয়েছে, যেখানে কবর দেয়া হয়েছে উন্মুক্ত অঙ্গনে। কবরের উপরে কোনো স্থাপত্যিক আচ্ছাদন রাখা হয়নি। কয়েকজন খ্যাতিমান সাধক পুরুষের সমাধি এর উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিলেটের হজরত শাহজালাল (.)-এর সমাধি এবং পান্ডুয়ার (মালদা, পশ্চিমবঙ্গ) ছোটি দরগায় আলাউল হক (.)-এর নূর কুতব আলম (.)-এর সমাধি।মৃত্যুর পর ধার্মিকের কর্মই তাকে নিরাপত্তা দেবে আচ্ছাদিত করবে’— ধারণা থেকেই সম্ভবত উল্লিখিত সমাধিগুলো আচ্ছাদিত করা হয়নি। বাংলায় আগত প্রথম দিকের সুফিদের অন্যতম বাবা আদম (.)-এর সমাধিতেও (রামপাল, মুন্সীগঞ্জ) কোনো স্থাপত্যিক আচ্ছাদন নেই। বাংলার প্রথম যুগের গাজীদের সমাধিগুলোর মধ্যে ত্রিবেণীর মাজার-মাদ্রাসা কমপ্লেক্স আচ্ছাদনহীন উন্মুক্ত সমাধি শ্রেণীর

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন