পৃথক পৃথক ভবন বা স্থাপত্যের কথা উল্লেখে মুসলিম স্থাপত্যকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা বা পরস্ফুিট করা যায় না। এ রীতি সঠিক বৈজ্ঞানিক রীতিও নয়, কারণ একেক যুগে একেক বিশেষ ধরন-ধারণ বা স্টাইল তৈরি হয়, এটি স্বাভাবিক বা ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ তার রীতিতে ব্যক্তি বা একটি বিশেষ রাজত্বের শাসকদের বিশিষ্ট রুচি ও ভাব-ভাবনার স্বাক্ষর মেলে; সুতরাং সেই যুগে নির্মিত সব স্থাপত্যই একটি সাধারণ ঢঙের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। পৃথক পৃথক আলোচনা তাই বিজ্ঞানসম্মত নয়। এই ভ্রান্তিতে পড়েছেন প্রায় প্রতিটি গবেষক-আলোচক। ক্রিটন, র্যাভেনশ, আবিদ আলি খান চৌধুরী, এমনকি জ্যামিতিক নকশা উপস্থিত করায় নতুনত্বের দিশারি হয়েও মনমোহন চক্রবর্তী ও সরসীকুমার সরস্বতী সঠিক পথে যাননি বলে বর্তমান লেখকের ধারণা। প্রতিটি শিল্পকর্মের নিজস্ব অগ্রগতি বা বিকাশের ধারা আছে। সেই বিকাশের পথে কতই না আদান-প্রদান! তার চিত্র অনুপস্থিত থাকলে সেই স্থাপত্যরীতির সঠিক মূল্যায়নও সম্ভব নয়। ভৌগোলিক, উপাদান, স্থানীয় ঐতিহ্য, বিদেশী প্রভাব—সবই এসব রীতিকে বারবার প্রভাবান্বিত করে থাকে। এসব উপাদানকে পৃথক চৌহদ্দিতে আবদ্ধ করা যায় না, করা সম্ভবও নয়, কিন্তু তাদের রীতি বারবার ভিন্ন ভিন্ন যুগে বাঁক বদল করেছে। সেই বাঁকের চিত্রটি তুলে ধরলে যুগে যুগে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন রুচি ও ঐকান্তিকতার ইতিবৃত্ত যেমন পাওয়া যায়, তেমনি বাংলার মৃত্তিকায় মুসলিম স্থাপত্যের যুগচিহ্নাবলি সুস্পষ্ট না হলেও মোটা দাগে ভাগ করা যায়। ‘মোটা দাগে’ কথাটির অর্থ—যে ক্রান্তিকালে পূর্বকালের চিহ্ন উত্তরকাল কিছুটা বহন করে—সেজন্য সেখানে স্পষ্ট পৃথকীকরণ সম্ভব নয়।
স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের উপাদান বা মাধ্যম একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলায় পরিপূর্ণ পাথরের ভবন, মন্দির বা মসজিদ তৈরি হওয়ার পক্ষে বাধা তার উপাদান সংগ্রহে অসুবিধা। অধুনা পশ্চিম বাংলার মালদহেরই সন্নিকটে রাজমহল পাহাড়ই কালো পাথরের সংগ্রহস্থল। বেলেপাথর ও গ্রানাইট পাথরের যে নমুনা বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়, তা বিহার থেকে আমদানি বলেই মনে হয় (মালদহে একাধিক প্রাপ্ত ভাস্কর্য বেলেপাথরে নির্মিত), সুতরাং বাংলার একমাত্র স্থাপত্য ও বহু ভাস্কর্যের