শায়েস্তা খানের সময়কালীন স্থাপত্য

নুরুল আমিন

স্থাপত্য নির্মাণ, অলংকরণ এবং এর নির্মাণ উপাদান সাধারণত সমকালীন সমাজের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক আদর্শিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় জলবায়ুগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে। কোন থিম বা চিন্তার ওপর স্থাপত্য নির্মাণ করা হবে সেক্ষেত্রে বিশেষ সমাজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং নির্মাণ উপাদান প্রাপ্তির সহজলভ্যতার রয়েছে সুগভীর প্রভাব। কোনো সমাজের নানাবিধ সাংস্কৃতিক প্রভাবক স্থাপত্য নির্মাণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। যেকোনো স্থাপত্যের কাঠামোগত চিন্তা, তার ব্যবহারিক সজ্জাগত দিকই নির্ধারণ করে এর দ্বারা কী প্রকাশ করা হচ্ছে। আত্তীকৃত প্রযুক্তি, নির্মাণ উপাদানের সুসংহত প্রক্রিয়াকরণ, দক্ষ কারিগর, সৃজনশীল চিন্তা, আর্থসামাজিক এবং ভৌগোলিক প্রভাবক স্থাপত্য নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রধানতম বিবেচ্য বিষয়।

উল্লেখ্য, বিশ্বের ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলাম হলো সবচেয়ে গণতান্ত্রিক ধর্ম। এই ধর্ম ভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ এবং এতে রয়েছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ সংহতিবাদের অপূর্ব সমন্বয়। আর জন্যই মুসলমানদের উপাসনা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলেও এর সমষ্টিগত রূপ আছে। আর সমষ্টিগত রূপকে কেন্দ্র করেই ইসলামের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি আবর্তিত হয়। মসজিদে সালাত করা ইসলামের সমষ্টিগত রূপ প্রকাশের অপরিহার্য শর্ত। আবার ইসলামী সমাজ স্থবির নয়, বরং ক্রম প্রসারমাণ। আবার ইসলামী জামায়াত বৃহৎ থেকে হতে থাকে বৃহত্তর। তাই পার্শ্ববর্তী জমির সহজলভ্যতা এবং এর বৈশিষ্ট্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাতে করে ভবিষ্যতে মসজিদের সম্প্রসারণ সম্ভব হয় এবং অধিকাংশ লোক একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। তাই ইসলামী স্থাপত্য আনুভূমিকতার আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন বে আইল এবং গম্বুজের পুনরাবৃত্তিতে ইমারতের আনুভূমিক প্রকৃতির অনুভূতি জন্মে।

মোগল আমলে বাংলাদেশের স্থাপত্য এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। মোগল সাম্রাজ্য কর্তৃক নিয়মিত যেসব গভর্নর বা সুবাদার নিযুক্ত করা হতো তারা কোনো না কোনোভাবে মোগল রাজপরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। তাদের অনেকেই স্থাপত্যের সমঝদার ছিলেন। সুবাদারদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সাম্রাজ্যের যোগসূত্র ছিল। ফলে অঞ্চলে যেসব স্থাপত্য নির্মিত হতো সেক্ষেত্রে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় সাম্রাজ্যের বিখ্যাত স্থপতি নির্মাতাদের কাছ থেকে সুবাদারদের বিভিন্ন ড্রয়িং বা ডিজাইন সরবরাহ করা হতো। ফলে এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় মোগল স্থাপত্যরীতি অঞ্চলে অনুপ্রবেশ এবং স্থানীয় রীতির সঙ্গে আত্তীকরণের মাধ্যমে বিকশিত হয়। ঢাকা ঢাকার পারিপার্শ্বিক অঞ্চলে মোগল সুবাদার শায়েস্তা খানের সময় অনেক ধর্মীয় ধর্মনিরপেক্ষ স্থাপত্য গড়ে ওঠে, যাতে স্থানীয় স্থাপত্যরীতির সঙ্গে মোগল সাম্রাজ্যিক স্থাপত্যরীতির অনুপ্রবেশ আত্তীকরণ স্পষ্টত লক্ষণীয়। যেমন সুবাদাররা স্থানীয় নির্মাণ উপাদানের মাধ্যমেই স্থাপত্য নির্মাণ করে সন্তুষ্ট থাকেন, কারণ, উত্তর ভারতের লাল পাথর সাদা মার্বেল অঞ্চলে সচরাচর নয়।

যা হোক, মোগল সুবাদারদের আগমনের মাধ্যমে ঢাকা আগের চেয়ে বেশি জাঁকালো এবং বিখ্যাত শহরে পরিণত হয়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায়, মোগল সুবাদার মীর জুমলার মৃত্যুর পর ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেব শায়েস্তা খানকে অঞ্চলের সুবাদার নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন ইরানিয়ান বংশোদ্ভূত আসফ খানের পুত্র এবং মির্জা গিয়াস বেগ ইতিমাতদ্দৌলার পৌত্র। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রানী নুরজাহান মির্জা গিয়াস বেগ ইতিমাতদ্দৌলার কন্যা এবং শাহজাহানের রানী মমতাজমহল ছিলেন আসফ খানের কন্যা। সুতরাং সম্পর্কে তিনি মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মামা মমতাজমহলের ভাই। শায়েস্তা খান মাঝখানে দুই বছরের বিরতি দিয়ে প্রথম দফায় ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথম কিছুদিন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর থেকে ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাস পর্যন্ত বাংলার সুবাদার ছিলেন। তার নানাবিধ কৃতিত্বের মধ্যে কৃষির উন্নতি, জলদুস্যদের অত্যাচার লুটতরাজ দমন,

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন