প্রাক-ইসলামিক সময়ের স্থাপত্য

পারভীন হাসান

বাংলাতে সুলতানি আমলে নির্মিত মসজিদের স্থাপত্যে সুস্পষ্টভাবেই সুলতানি জীবনাচার আর সংস্কৃতির অভিযোজন চোখে পড়ে। মুসলিম সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণের পরিপূরক হিসেবে স্থাপত্যের আদি নকশাগুলো ব্যবহার করে নতুন ধরনের অলংকরণ চিত্রিত হয়। মসজিদের নকশা আর গঠনে অনুসরণ করা হয়েছে গ্রামীণ কুঁড়েঘরের নির্মাণরীতি। সে সময়ের গ্রামীণ ঘরগুলো যেমন ছিল, কাঠের বা মাটির চার দেয়ালে বাঁকানো কার্নিশযুক্ত তালপাতা বা খড়ের ছাউনি। ১১ শতকের বৌদ্ধ পাণ্ডুলিপি থেকে প্রাপ্ত মন্দিরের চিত্রের পাশাপাশি অষ্টম কিংবা দ্বাদশ শতকের বাংলার প্রতিবেশী ভূখণ্ড মিয়ানমারের (তত্কালীন বার্মা) বিদ্যমান মন্দিরের চিত্র, যখন বাংলার সঙ্গে বার্মার ধর্মীয় সাংস্কৃতিক গাঢ় সম্পর্ক ছিল, স্থাপত্যের একই ধরনের আদিরূপের নির্দেশনা প্রদান করে। দুর্ভাগ্যবশত, সুলতানি আমলে নির্মিত ঘরগুলোর মধ্যে কোনোটি আর টিকে নেই। কারণ ওই স্থাপত্যগুলো ছিল সাময়িক আর ক্ষণস্থায়ী। তবে পরবর্তী সময়ে কুঁড়েঘরের মৌলিক বা আদি নকশাগত বৈশিষ্ট্যের প্রচলন টিকে যায়। তাছাড়া মানুষদের মধ্যে নতুন নতুন উদ্ভাবনসংক্রান্ত বড় রকমের চাহিদাও তৈরি হয়নি। গ্রামের বাসিন্দারা তাদের আর্থিক অবস্থা খানিকটা ভালোর দিকে গেলে মাটি আর বাঁশের তৈরি কুঁড়েঘরগুলো ছাউনিতে খড় বা তালপাতার পরিবর্তে কেবল টিনের ব্যবহার করত। বাংলার গ্রামগুলোতে সাধারণত একটি বড় উঠোনজুড়ে কয়েক ঘর বাসিন্দা বসবাস করত, এখনো করে। ঘরগুলো বাঁশের বেড়া, নলখাগড়ার চাটাই বা মাদুর কিংবা বাঁশ অথবা কাঠের কাঠামোর ওপর মাটির প্রস্তর দিয়ে তৈরি আয়তাকার কিংবা চারকোনা ধরনের এক কক্ষবিশিষ্ট। ঘরের ছাউনিগুলো পরিচিত দোচালা কিংবা চৌচালা নামে, যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাঁশের কাঠামোর ওপর খড় বা তালপাতা দিয়ে ছাউনি দেয়া হতো। দোচালার ক্ষেত্রে ঘরের কেন্দ্রবরাবর ছাউনির ঢালকে দুই স্তরে নিচে নামানো হয়, দুটি ঢালু অংশের উপরের প্রান্তে ব্যবহার করা হয় বাঁশ কিংবা টিন, সাধারণত বাঁশ ব্যবহার করা হতো চালার কাঠামোতে, যা কিনা নমনীয় তবে শক্ত। দোচালার মতো চৌচালাতেও একই ধরনের উপকরণ ব্যবহার হতো। শুধু ধরনের চালায় চারটি ঢাল থাকে। অতীতের স্থাপত্য ধরন অনুযায়ী এখনো গ্রামের লোকেরা ইট দিয়ে তৈরি বাড়িগুলোতেও কংক্রিটের সমান্তরাল ছাদ না দিয়ে বরং টিন কিংবা মাটির টালি ব্যবহার করে দোচালা কিংবা চৌচালা ছাউনি দিয়ে থাকে।

প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে প্রাপ্ত চিত্রগুলো নির্দেশ করে, অনেক ক্ষেত্রে প্রাসাদ ধরনের বাড়ি তৈরিতেও কুঁড়েঘরের নকশার অনুকরণ করা হয়েছে; পার্থক্য বলতে এক্ষেত্রে কেবল ভবনটির পরিসর বৃদ্ধি আর নির্মাণ অলংকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে বৈচিত্র্যময় আর দামি উপকরণ। ধরনের একটি প্রাসাদের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়ইসকেন্দার নামাতে। ১৫৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দের দিকে ওই ভবনটি নির্মিত হয় বাংলার সুলতান নুসরাত শাহের জন্য। পর্যান্ত উদাহরণের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও প্রাসাদটির প্রাপ্ত ছবিটি সে সময়ের রাজকীয় ভবনগুলোর বিশালতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। বইটিতে আলেকজান্ডার কর্তৃক দারার কন্যা রোশানাককে গ্রহণের ছোট একটি চিত্র জুড়ে দেয়া আছে। সেখানে

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন