যৌথ অংশীদারির ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান শিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোনকে নিয়োগ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। গতকাল প্রথম ধাপে পাঁচ কোম্পানিকে জমি বরাদ্দ উপলক্ষে বিনিয়োগ উন্নয়ন বা ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন শীর্ষক কর্মসূচি পালন করে বেজা ও পাওয়ারপ্যাক। এ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শুরু হলো মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বেজার
নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ
অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রনো হক শিকদার ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের
প্রকল্প পরিচালক সালাউদ্দিনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের কাছে ২০৫
একর জমি নিয়ে গঠিত এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রথম ধাপেই ৪৪ শতাংশ ভূমি বরাদ্দ দেয়ার কথা
জানিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ। গতকাল পাঁচটি
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমি বরাদ্দ চুক্তি হয়,
যার চারটিই এনার্জিপ্যাকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এর
বাইরে রয়েছে বহুজাতিক ইউনিলিভারের অন্যতম পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাগা
লিমিটেড।
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১১ একর জমি বরাদ্দ
পেয়েছে নাগা। এছাড়া শিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক পেট্রোলিয়ামকে আট
একর, এনার্জিপ্যাককে
১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আট একর,
শিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক
স্টিলকে ২২ একর ও মোটরসাইকেল সংযোজনের জন্য একটি কোম্পানিকে ১৪ একর জমি বরাদ্দ
দেয়া হয়। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক ও শিকদার ইন্স্যুরেন্সকে শাখা খোলার জন্য ছোট
আকারের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, ১৯৯৬
সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। মূলত
বঙ্গবন্ধুর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করপোরেশন বা বিসিক থেকে বিশেষ শিল্পাঞ্চলের
ধারণা নেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন ধারণা থাকলেও বাংলাদেশে এর
বিশেষত্ব হলো এখানে দেশভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
সুন্দরবনের কাছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল
প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে
অত্যন্ত সচেতন এবং সতর্ক। সুন্দরবনের পাশে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এ ধরনের
প্রকল্প হাতে নেয়া হতো না। এখনো কোনো পরিবেশগত ঝুঁকি আছে কিনা, তা
নিয়মিত খোঁজ রাখা হবে। তবে সুন্দরবনের কাছে হওয়ায় এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা
স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য
সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানে পবন চৌধুরী বলেন, ২০১৫
সালে জোর গতি নিয়ে যাত্রার পর পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। শুরুতে
অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অনেকে বুঝে উঠতে পারেননি। এখন সারা দেশে অন্তত
২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ চলমান আছে। মোংলার জন্য দুবার দরপত্র আহ্বান করেও
বেজা ব্যর্থ হয়েছিল। শ্রীহট্টতেও খুব সামান্য টাকার বিনিময়ে জমি চাওয়া হয়েছিল
শুরুতে। এখন সেই পরিস্থিতি একেবারেই কেটে গেছে। পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে এ
অঞ্চলে শিল্প স্থাপন হবে সবচেয়ে লাভজনক।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক
সালাউদ্দিন বলেন, মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল এখন সম্পূর্ণভাবে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রস্তুত।