৪৭ জেলায় স্থাপন হচ্ছে কিডনি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি বছর ৪০ হাজার মানুষের কিডনি পুরোপুরি অকেজো হচ্ছে। প্রায় দুই লাখ রোগী রয়েছে, যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস না করালে মারা যেতে পারে। কিডনি রোগের এমন ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে দেশের ৪৭ জেলায় বিদ্যমান হাসপাতালগুলোয় কিডনি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী কিডনি রোগীদের সুচিকিৎসা দিতে ২৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৭ জেলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যার এবং মেডিকেল কলেজ নেই এমন ১০ জেলার সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য, কিডনি রোগের মানসম্মত চিকিৎসা প্রদান, প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা উন্নীত করা এবং এ রোগের চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস করা। এরই মধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের মানুষের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এরই মধ্যে দেশের সব বিভাগে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে নানা কারণে কিডনি রোগ বাড়ছে। তাই এ রোগের চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি জরুরি। সরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়া গেলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে আসবে। এজন্য জেলা পর্যায়ে এ রোগের সেবা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

কিডনি রোগীর জন্য মাত্র দুই রকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ডায়ালাইসিস এবং কিডনি প্রতিস্থাপন। দুই ধরনের চিকিৎসাই ব্যয়বহুল। তাছাড়া ক্রনিক কিডনি রোগের শেষ ধাপে (এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ) রোগীর প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানোটা বাধ্যতামূলক। নইলে রোগী মারা যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে না ওঠার কারণে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগী মারা যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজির সাউথ এশিয়া কমিটির কো-চেয়ার ও বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-আর রশিদ বলেন, কিডনি অকেজো হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনই হলো বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। কিন্তু চিকিৎসার অভাবেই এ ধরনের রোগীর সিংহভাগই মারা যাচ্ছে। যদিও নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে একজন কিডনি রোগী ৫-১৫ বছর এবং সফল কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে ১৫-২৫ বছর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু দেশে প্রতি বছরই কিডনি রোগে আক্রান্ত হলেও যথার্থ সুচিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে রোগটির চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। সরকারের এ ধরনের উদ্যোগে দেশের মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন