ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সফলতম দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে চলতি মৌসুমে রেড ডেভিলরা রীতিমতো বিপর্যস্ত। প্রিমিয়ার লিগে আট ম্যাচে দুই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের ১২তম স্থানে দলটি। আর সব ধরনের প্রতিযোগিতায় তারা মাত্র তিনটি জয় পেয়েছে। এমন বাস্তবতায় কোচ ওলে গুনার সোলশারের বিদায় দেখছেন কেউ কেউ। ক্লাবের সাবেক তারকাদের অনেকে আবার সোলশারকে আরেকটু সময় দেয়ার পরামর্শ দিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই হয়তো দলবদলে
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালতে চাইতেন। তবে সোলশার সে পথে হাঁটছেন না। দলের বর্তমান
অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে কোনো খেলোয়াড় কিনে ভুল করতে চান না তিনি। নরওয়েজিয়ান কোচ বরং
নিজের পরিকল্পনায় অটল রয়েছেন। তিনি চান ক্লাবটি পুনর্গঠনের মধ্য দিয়েই যাক। এজন্য
যুব প্রকল্পে বেশি জোর দিচ্ছেন তিনি। বর্তমান দলেও একাডেমির একাধিক খেলোয়াড়কে
সুযোগ করে দিচ্ছেন।
গুঞ্জন রয়েছে, আগামী
দুটি মৌসুমে ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে দল গোছাতে পারে রেড ডেভিলরা। এমনকি দল
গোছানোর কাজ জানুয়ারিতেই শুরু হয়ে যেতে পারে। এ সময় ম্যানচেস্টার জায়ান্টদের প্রথম
পছন্দ নাকি মারিও মান্দজুকিচ। ৩৩ বছর বয়সী ক্রোয়াট স্ট্রাইকারের জন্য জুভেন্টাস
চেয়েছে ১ কোটি পাউন্ড। তবে তাড়াহুড়ো করে আর ভুল করতে চায় না রেড ডেভিলরা। সানচেজকে
আর্সেনাল থেকে অদল-বদল চুক্তিতে আনার পর ৪২ মিলিয়ন পাউন্ড বেতন দেয়া হলেও তা বিফলেই যায়।
অবশেষে এ গ্রীষ্মে তাকে ধার চুক্তিতে পাঠানো হয়েছে ইন্টার মিলানে।
নিয়োগে ভুল করা থেকে বাঁচতেই তারা
সাহায্য নেবে স্প্যানিশ কনসালট্যান্সি ফার্মের। মাদ্রিদভিত্তিক ড্রিবল্যাবের কথা
এরই মধ্যে ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছেন সোলশার। ড্রিবল্যাবের কাছে অন্তত এক লাখ
খেলোয়াড়ের তথ্য আছে, যাদের আপনি কেনার বিবেচনায় রাখতে পারেন। লা লিগার অন্তত ১২টি ক্লাব
ড্রিবল্যাবের গ্রাহকের তালিকায় রয়েছে। এমনকি ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপের দল নটিংহাম
ফরেস্টও প্রিমিয়ার লিগে ফেরার মিশনে সঠিকভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সারতে এই
ড্রিবল্যাবের শরণাপন্ন হয়েছে। এবার ম্যানইউর মতো হাইপ্রোফাইল গ্রাহক পেতে যাচ্ছে
ড্রিবল্যাব।
বিশ্বের প্রায় ১০০টি প্রতিযোগিতা থেকে
১৬ বছরের বেশি বয়সী খেলোয়াড়দের শক্তি ও দুর্বলতা, ইনজুরিতে পড়ার হার, দৌড়ানোর
গতি কিংবা বলে লাথি মারার দক্ষতার মতো বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে ড্রিবল্যাব। এমনকি
গোল-ফর্মুলা
নিয়েও কাজ করে তারা এবং অ্যাটাকার ও গোলকিপারের পারফরম্যান্স নিম্নমানের না
উচ্চমানের, তাও পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
বিশ্বব্যাপী ম্যানইউর স্কাউট রয়েছে, যারা
সোলশার ও মাইক ফেলানকে তথ্য সরবরাহ করেন এবং এ দুজন আবার দলবদলের প্রধান এড
উডওয়ার্ডকে অবহিত করেন। কিন্তু এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং খেলোয়াড়দের
ব্যাপারে আরো বেশি তথ্য পেতে তারা প্রযুক্তির সেবা নিতে পারে। এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞ
স্কাউট জিম লালর ও তার স্টাফদের ওপর নির্ভর করে আসছে ম্যানইউ। কিন্তু ভবিষ্যতে
তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যেতে পারে।
স্কাউটরা এরই মধ্যে প্রায় অর্ধডজন
খেলোয়াড়ের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন উডওয়ার্ডের কাছে। কিন্তু যাদেরই কেনা হোক না কেন, গ্রীষ্ম
পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় ক্লাবটি। আর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সানচেজকে কেনার
স্মৃতি আরো বহুদিন তাড়িয়ে বেড়াবে উডওয়ার্ডকে। ওই সময় কোচ হোসে মরিনহোর সিদ্ধান্তকে
সমর্থন করেছিল ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সানচেজ ৪২ মিলিয়ন পাউন্ড বেতন নিয়ে গোল করেছেন
মাত্র ৫টি!
ফরাসি ক্লাব লিওঁর স্ট্রাইকার মুসা
ডেম্বেলে রয়েছেন ম্যানইউর সংক্ষিপ্ত তালিকায়। তবে রেড ডেভিলরা ৭১ মিলিয়ন পাউন্ড
দিয়ে তাকে কিনতে তড়িঘড়ি না করে একটু অপেক্ষা করতে চায়। ভার্জিল ফন ডাইককে কিনতে
লিভারপুল অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করেছিল,
তার সুফলও পেয়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লোপ। ম্যানইউও
ক্লোপের পথে হাঁটতে চায়। তারা যেনতেন খেলোয়াড়ের পেছনে টাকা না ঢেলে বরং অপেক্ষা
করে ভালো মানের ডিফেন্ডার কেনার পরিকল্পনায় হাঁটছে।
ব্যক্তিগতভাবে সোলশারের লক্ষ্য এবার
শীর্ষ ‘৬’-এর মধ্যে থাকা এবং চাকরিটা বাঁচানো। পরের মৌসুমে শিরোপা জয়ের লক্ষ্য
নির্ধারণ করেছেন তিনি। ক্লাবটিও কোচকে দল পুনর্গঠনে কিছুটা সময় দিতে চান। গত
গ্রীষ্মেই শুরু হয়েছে এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। তখন ক্লাবটি কিনে নেয় হ্যারি মাগুইয়ার, অ্যারন
ওয়ান-বিসাকা
ও ড্যানিয়েল জেমসকে।
এদিকে ম্যানইউ লিজেন্ড ব্রায়ান রবসন
মনে করেন, বিকল্প খেলোয়াড় না কিনেই রোমেলু লুকাকু ও অ্যালেক্সিস সানচেজের মতো বড়
খেলোয়াড় বিক্রি করে দেয়াটা ছিল ম্যানইউর বড় ভুল। অবশ্য রেড ডেভিলদের সাবেক অধিনায়ক
বলছেন, একজন কোচ হিসেবে সোলশার সফল না ব্যর্থ, তা নির্ধারণে অন্তত তিন মৌসুম দেখা
উচিত।
রবসন বলেন, ‘আমি
মনে করি, এটা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ম্যানইউর একমাত্র ভুল। কারণ এ মৌসুমে
বেশকিছু ইনজুরির ঘটনাও ঘটেছে। তাই বলা যায়,
ম্যানইউ নিজেই নিজেকে খানিকটা পেছনে ঠেলে দিয়েছে
এবং এখন সেভাবেই চলছে। লুকাকু,
সানচেজ,
অ্যান্ডার হেরেরা, ক্রিস স্মলিংরা সবাই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়।
বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে অল্পবয়সী ছেলেগুলোর চেয়ে ওই অভিজ্ঞদেরই দরকার ছিল।
মানুষ নেতার কথা বলে এবং প্রত্যেক ক্লাবেরই তা দরকার। মিডফিল্ড কিংবা সেন্টার
ব্যাক যে পজিশনই হোক না কেন,
মাঠটা গুছিয়ে রাখতে নেতা দরকার।’
৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে সূচনা
করেছে ম্যানইউ। একের পর এক ম্যাচ হার কিংবা ড্র করে চলেছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে
আগামী রোববার তারা মুখোমুখি হবে লিভারপুলের। বলা হচ্ছে, ওই
ম্যাচটিই ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে সোলশারের। এ নিয়ে রবসন বলেন, ‘আপনাদের
ম্যানেজার ভালো করছে কিনা তা দেখবেন অন্তত তিন বছর পর। ক্লাব তো ওলের ওপর আস্থা
রেখেছে এবং তিনি যুব প্রকল্প উন্নয়নের মাধ্যমে দলে আরো বেশি তরুণকে নিয়ে আসার
প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন।’ স্পোর্টসমেইল, মেট্রো