বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

৬ শতাংশে নামবে ভারতের প্রবৃদ্ধি

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক শ্লথগতির ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক প্রান্তিকগুলোয় ব্যাপক-বিস্তৃত অবনতির পর ২০১৯ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে ৬ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস করেছে বিশ্বব্যাংক। তবে প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমলেও বিপুল সম্ভাবনাসহ ভারত এখনো বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের এক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও লাইভমিন্ট।

গতকালসাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস শীর্ষক প্রতিবেদনের সর্বশেষ সংস্করণে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি কমলেও ধীরে ধীরে বেড়ে ২০২১ সালে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ও ২০২২ সালে ৭ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলপ্রসূ মূল্য গতিশীলতার কারণে ভারতঅ্যাকোমোডেটিভ অবস্থান ধরে রাখবে এবং এর ফলে ধীরে ধীরে দেশটির প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক।

উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৭ দশমিক ২ শতাংশের চেয়ে কম।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আসন্ন বার্ষিক বৈঠকের আগে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টানা দ্বিতীয় বছর হ্রাস পাওয়ার তথ্য প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ও নির্মাণ কার্যক্রমের উত্থানের কারণে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতের শিল্প উৎপাদন প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে কৃষি ও সেবা খাতে যথাক্রমে ২ দশমিক ৯ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যায়।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চাহিদায় বড় পতন এবং শিল্প ও সেবা উভয় খাতের দুর্বলতায় ভারতে সার্বিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। দেশটির মূল্যস্ফীতিতে অর্থনৈতিক গতির নিম্নমুখী প্রবণতা ও নিরবচ্ছিন্নভাবে নিম্ন খাদ্যমূল্যের প্রতিফলন দেখা গেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের প্রধান মূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধেও তা রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা ৪ শতাংশের বেশ নিচেই থাকতে দেখা গেছে। এ পরিস্থিতির কারণে মুদ্রানীতি শিথিল করতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মোট ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কর্তন করেছে আরবিআই।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের চলতি হিসাব ঘাটতি পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় সম্প্রসারিত হয়ে জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এ পরিস্থিতি মূলত বাণিজ্য ভারসাম্যের পতনের প্রতিফলন।

এদিকে প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী থাকলেও ভারত এখনো বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে নিজের স্থান ধরে রেখেছে বলে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হান্স টিমার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মন্থরগতি সত্ত্বেও দেশটির প্রবৃদ্ধির হার বিশ্বের অধিকাংশ দেশের তুলনায় বেশি রয়েছে। একই সঙ্গে অর্থনীতিটির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

টিমার বলেন, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মন্থর প্রবৃদ্ধি ভারতের টেকসই বিনিয়োগকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর এর অর্থ হলো দেশটিকে গুরুতর সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।

২০১৬ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। পরবর্তী দুই বছরে তা ২ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট করে হ্রাস পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে টিমার বলেন, এটা বড় ধরনের কোনো পতন নয়। এ পতনের সঙ্গে ২০১২ সালে আমরা যে মন্থরগতি দেখেছি, তার তুলনা করা যেতে পারে। এমনকি এই পতন ২০০৯ সালের তুলনায়ও কম। তবে এটি যে গুরুতর পতন, তা স্বীকার করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন