ভারতে গাড়ি বিক্রির সঙ্গে শিল্প উৎপাদনেও বড় পতন

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের শিল্প উৎপাদন প্রায় সাত বছরের নিম্নে নেমে এসেছে এবং দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবার সংকুচিত হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ক্যাপিটাল গুডস ও কনজিউমার ডিউরেবলস খাতের বড় পতন এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে ফের গাড়ি বিক্রি কমেছে। এ নিয়ে টানা ১১ মাস দেশটিতে গাড়ি বিক্রি কমল। এ পরিস্থিতি চলমান অর্থনৈতিক শ্লথগতি ঠেকাতে ভারতের নীতিনির্ধারকদের নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, লাইভমিন্ট।

ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান অফিসের (এনএসও) তথ্যানুসারে, চলতি বছর আগস্টে শিল্প উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে শিল্প উৎপাদন কমেছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

ভারতের অর্থনীতিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পাঁচ বছর ধরে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়া। বছরওয়ারি হিসাবে আগস্টে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের সংকোচন ঘটেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ কর্মসংস্থান বাড়াতে এ খাতের প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ছয় মাসের মধ্যে এবারই প্রথম খাতটিতে সংকোচন ঘটল।

অন্যদিকে শিল্প কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক ক্যাপিটাল গুডস খাত আগস্টে সংকুচিত হয়েছে ২১ শতাংশ। চাহিদার দুর্বলতার জেরে কনজিউমার ডিউরেবলস খাত (দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্য যেমন জুয়েলারি, ফ্রিজ ইত্যাদি) সংকুচিত হয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। অবকাঠামো ও নির্মাণ পণ্য খাত সংকুচিত হয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। খননে প্রবৃদ্ধি মাত্র শূন্য ১ শতাংশ।

ভারত চেম্বারের সভাপতি সীতারাম শর্মা বলেন, চাহিদার অভাবই প্রধান সমস্যা। চাহিদার দুর্বলতা বজায় থাকায় কোম্পানিগুলো উৎপাদন বাড়াচ্ছে না। চাহিদা বাড়ানোর জন্য মানুষের হাতে নগদ অর্থের সরবরাহ বাড়াতে হবে। আয়কর না কমালে এ লক্ষ্যপূরণ কঠিন হবে।

এদিকে চাহিদার দুর্বলতা না কাটায় সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না ভারতের গাড়ি খাত। উৎসবের মৌসুমে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাবে বলে প্রত্যাশা করেছিল খাতসংশ্লিষ্টরা। গাড়ি সংস্থাগুলোর সংগঠন সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারারসের (সিয়াম) প্রকাশ করা তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বর নিয়ে টানা ১১ মাস কমেছে সার্বিক যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি। সব মডেলের গাড়ি মিলিয়েও পরিস্থিতি প্রায় এক।

সিয়ামের তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বরে সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার। আগের বছর সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছিল ২ লাখ ৯২ হাজার। অর্থাৎ এক বছর আগের তুলনায় বিক্রি কমেছে ২৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। একইভাবে অর্থবছরের প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) বিক্রি কমেছে ২৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মোটরসাইকেলের বিক্রি কমেছে ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি কমেছে ৩৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০০৯ সালের জানুয়ারির পর এত খারাপ পরিস্থিতি দেখা যায়নি বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রিতে।

সিয়ামের প্রেসিডেন্ট রাজন ওয়াধেরা জানিয়েছেন, অর্থনীতির শ্লথগতির পাশাপাশি বন্যার ফলে উত্তর প্রদেশ, বিহার ও মহারাষ্ট্রে গাড়ি বিক্রি ভালো ধাক্কা খেয়েছে। এসব রাজ্য প্রশাসনের বাস কেনা কমানো, বাজারে কম চাহিদার ফলে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন কমার বিরূপ প্রভাব মূলত পড়েছে বাণিজ্যিক গাড়ির বাজারে।

সিয়াম বলছে, চাহিদা কমার ফলে শোরুমগুলোয় বহু গাড়ি জমে গেছে। এগুলো বিক্রি হওয়ার আগে তারা নতুন গাড়ি কিনতে চাইছে না। সেসঙ্গে জিএসটি না কমার বিষয়টি তো রয়েছেই।

তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছে গাড়ি খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছে, বন্যায় গাড়ি বিক্রি কমলেও বর্ষার কারণে চাষ ভালো হয়েছে। ফলে গ্রামের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। অন্যদিকে নবরাত্রি উৎসব ঘিরে গত ১০-১২ দিনে গাড়ি কেনায় উৎসাহ দেখা গেছে। উৎসব মৌসুমে গাড়ি নির্মাতারা যে বিশেষ ছাড় দিয়েছে, তা কাজে লাগাতে চাইছে সাধারণ মানুষ।

ভারতের অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা চলতি ও আগামী বছরের জন্য দেশটির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। এমনকি চলতি বছরের জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও নিজেদের পূর্বাভাস আগের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন