আবরার হত্যা

শিক্ষার্থী বহিষ্কারসহ পাঁচ সিদ্ধান্তের ‘বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ঢাবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার জেরে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি ‘বিজ্ঞপ্তি’ ও ‘অফিস আদেশ’ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

শুক্রবারের (১১ অক্টোবর) তারিখে প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তিগুলোতে স্বাক্ষর করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিগুলোর মধ্যে একটি অফিস আদেশ, দুটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি এবং অন্য দুটিকে বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকাশিত অফিস আদেশটিতে লেখা হয়েছে, ‘গত ০৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক হত্যা ঘটনার মামলায় এজাহারভুক্ত ১৯ জনকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হল। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। 

অফিস আদেশে আরো বলা হয়েছে, চলমান তদন্ত প্রতিবেদন-এর পর ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিন্ডিকেটের অনুমোদন মাধ্যমে দোষীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। এছাড়া আদালতে বিচারে এই মামলায় অন্য কেউ সাজাপ্রাপ্ত হলে তাকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।’

প্রকাশিত জরুরি বিজ্ঞপ্তি দুটির একটিতে লেখা হয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হলো।’

অন্য জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ‘আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা চলাকালীন সকল খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং আবরার ফাহাদ-এর পরিবারকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।’

প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিগুলোর একটিতে লেখা হয়েছে, ‘র‌্যাগের নামে ছাত্রদের নির্যাতনের ঘটনা সংক্রান্ত অভিযোগ হমা দান ও প্রকাশের জন্য একটি ওয়েব ভিত্তিক পোর্টাল তৈরি করা হবে। যাতে যে কোন ছাত্র একটি ফর্মের মাধ্যমে তার অভিযোগ অনলাইনে জমা দিতে পারবে। অভিযোগ সমুহ পর্যবেক্ষণ করে ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সবচগুলো হলের প্রত্যে ফ্লোরের সকল উইয়য়ের দুপাশে প্রয়োজনীয় সিসিটিভি স্থাপন করা হবে।’

আরেকটি ‘বিজ্ঞপ্তিতে’ লেখা হয়েছে- ‘অবৈধভাবে যারা আবাসিক হলের সিট দখল করে আছে তাদের অতিসত্বর হলের সিট খালি করা, সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিসরুম বন্ধ করে তা সিলগালা করার জন্য ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ব্যবস্থা নিবেন। আগামীকাল (আজ) থেকেই উল্লেখিত কাজগুলো শুরু করা হবে। ভবিষ্যতে ছাত্র রাজনীতি করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিন লঙ্ঘন এর দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র‌্যাগিং বা ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ আসলে তা ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’

গত রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী আবরারের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে বেদম প্রহার করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। কুষ্টিয়ার ছেলে আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বর্তমানে একটি এনজিও সংস্থায় কর্মরত। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকতা করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন