শান্তিতে নোবেল ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলি।

গতকাল নরওয়ের রাজধানী অসলোতে সংবাদ সম্মেলনে তার নাম ঘোষণা করেন নোবেল কমিটির সচিব বেরিট রিস অ্যান্ডারসেন। তিনি বলেন, সামাজিক ন্যায় ও ঐক্য স্থাপনে আবি আহমেদের ভূমিকা অতুলনীয়। তাই পুরস্কৃত করা হচ্ছে তাকে। খবর বিবিসি ও সিএনএন।

প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ইথিওপিয়ার দুই দশক ধরে সামরিক উত্তেজনা চলছিল। গত বছর আবি আহমেদের আগ্রহ ও উদ্যোগে দুই দেশ শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়। এর ফলে ১৯৯৮-২০০০ সালের সীমান্তযুদ্ধের পর থেকে চলা ২০ বছরের সামরিক উত্তেজনার অবসান ঘটেছে।

এর আগে সুদানি প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশীরকে উচ্ছেদের পর সেনা কর্মকর্তা ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। সুদান, সোমালিয়া ও জিবুতিসহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আফ্রিকার কনিষ্ঠতম নেতা হিসেবে আবি আহমেদের (৪৩) অবদান অতুলনীয়। রুয়ান্ডায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীও ছিলেন তিনি।

১০০তম নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে আবি আহমেদের নাম ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি। ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করবেন। পুরস্কার হিসেবে সনদের পাশাপাশি পাবেন ৯০ কোটি সুইডিশ ক্রোনা বা ৯ লাখ ডলার।

ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়ার মধ্যে এখনো শান্তি নিশ্চিত হয়নি। তবে দুই দশকের অশান্তি পেরিয়ে আবি আহমেদের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের সম্ভাবনা অনেকখানি ত্বরান্বিত করেছে। এ ব্যাপারে অ্যান্ডারসেন বলেন, অনেকে বলতে পারেন, আবি আহমেদকে তড়িঘড়ি করে পুরস্কার দেয়া হলো। তার উদ্যোগকে সম্মান জানাতেই হয়। তবে এটা ঠিক, পরিস্থিতির উন্নতি করতে ইথিওপিয়ায় আরো অনেক কাজ বাকি।

১৯৯৩ সালে ইরিত্রিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে ইথিওপিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু ইরিত্রিয়ার সীমান্তবর্তী বাদমে অঞ্চলের দখল নিয়ে দুই দেশ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। বারবার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দুপক্ষেরই ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। দুই দেশের অর্থনীতিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ক্ষমতায় এসেই এ সংঘাত নিরসনে উদ্যোগ নেন আবি আহমেদ। একই সঙ্গে চলতে থাকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের কাজ।

প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে আবি আহমেদ দেখা করেন ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট আফওয়ার্কির সঙ্গে। সে সময় ইরিত্রিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে রকস্টারের মতো অভ্যর্থনা পান তিনি। শুরু হয় সীমান্ত সমস্যা নিয়ে মতবিনিময়। ২০১৮ সালের ৯ জুলাই আবি আহমেদ বাদমে অঞ্চলকে ইরিত্রিয়ার হাতেই সমর্পণ করেন। সীমান্ত খুলে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বেশকিছু উদারনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন আবি আহমেদ। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতেও যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদে অর্ধেক নারী নিয়োগ দেয়াসহ দেশটির প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রীও এসেছে তার সময়ে। হাজার হাজার বিরোধী কর্মীকে মুক্তি দিয়েছেন, নির্বাসিত নেতাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

আবি আহমেদ নিগৃহীত অরম জাতিগোষ্ঠীর নেতা। অরমরা দেসেলেন একনায়কত্বের সময় নানা বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ইথিওপিয়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিরসনে আবির কৌশল দারুণ কাজে দিয়েছে। ২০২০ সালে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবেন বলে শপথ নিয়েছেন সাবেক এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ইথিওপিয়া পুনর্গঠনে বহুধাবিভাজিত দেশটির সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনায় সমতা আনার প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন