বুয়েটে ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ

১৯ জনকে বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনাকালে গতকাল বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন। এ সময় আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেন তিনি। এদিকে পুলিশ গতকাল সিলেট ও সাতক্ষীরা থেকে মাজেদুল ও শামীম বিল্লাহ নামে এ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আরো দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত অমিত সাহা ও তোহাকে গতকাল আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুজনের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আবরার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বুয়েটে চলমান আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি নিয়ে গতকাল তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপাচার্য। আলোচনায় বুয়েটের ১৫ থেকে ১৮ ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় বুয়েট শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার শুরুতে আবরারের রুহের মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনাকালে বুয়েটের উপাচার্য বলেন, বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এবং বুয়েট কর্তৃপক্ষ মামলার খরচ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেয়া হবে। বুয়েটে র্যাগিং বন্ধ হবে।

একই মামলার ১৯ আসামিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উপাচার্য জানান। একই সঙ্গে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকেও আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে এ সময় আরো জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার তাদের পক্ষ থেকে আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়, বুয়েট উপাচার্য যদি শুক্রবার (গতকাল) তাদের সঙ্গে দেখা না করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেবেন। এ পরিস্থিতিতে উপাচার্যের পক্ষ থেকে আলোচনায় বসার কথা জানানো হয়।

আন্দোলনের পঞ্চম দিনে গতকাল সকালেই বুয়েট ক্যাম্পাসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে মিছিল ও পথনাটকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এদিকে আবরার হত্যা মামলার দুই আসামি মাজেদুল ইসলাম ও মো. শামীম বিল্লাহকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল ভোরে সিলেটের শাহ কিরন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে মাজেদুলকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (দক্ষিণ) ধানমন্ডি জোনাল টিম। ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা মাজেদুলকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গ্রেফতারকৃত মাজেদুল বুয়েটের উপকরণ ও ধাতুবিদ্যা প্রকৌশল (এমএমই) বিভাগের ১৭ ব্যাচের ছাত্র। মাজেদুল মামলার এজাহারভুক্ত ৮ নম্বর আসামি।

এছাড়া গতকাল মামলার ১৪ নম্বর আসামি মো. শামীম বিল্লাহকেও সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনিসুর রহমান মোল্লা জানান, গতকাল বিকালে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শামীম বিল্লাহকে তার বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ইছাপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। তার বাবার নাম আমিনুর রহমান ওরফে বাবলু সরদার। আটকের পর পরই শামীম বিল্লাহকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শামীম বিল্লাহ বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

এদিকে এ মামলায় আগে গ্রেফতার হওয়া দুই আসামি অমিত সাহা ও হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)

রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আবরার ফাহাদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শেরেবাংলা হলের যে কক্ষে আবরারকে নির্যাতন করা হয়, সেটি অমিত সাহার কক্ষ। অন্য আসামি তোহা আবরারকে ডেকে ওই কক্ষে নিয়ে আসেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বাকিদের গ্রেফতার করার জন্য এ দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

এ সময় হোসেন মোহাম্মদ তোহার আইনজীবী আদালতের কাছে দাবি করেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তোহা জড়িত নয়। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে অমিত ও তোহাকে পাঁচদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন