চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ

চেয়ারম্যানের অনাগ্রহে আড়াই বছর তালাবদ্ধ কোটি টাকার ভবন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বাগেরহাট

নির্মাণ শেষে আড়াই বছর আগে হস্তান্তর করা হয় বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ের ভবন। তবে এত দিনেও কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত ওই ভবনে পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অনাগ্রহে ভবনটি তালাবদ্ধ রেখেই পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় বসানো হয়েছে একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালে চিংড়াখালী ইউনিয়নের পরিষদ ভবন নির্মাণ শুরু হয়। তিনতলা এ ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর নির্মাণ শেষে ভবনটি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহাদাত এন্টারপ্রাইজ।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার নারকেলবাড়িয়া বাজারের পাশেই তিনতলা এ ইউপি ভবনের নিচতলা ফাঁকা। দোতলা ও তিনতলার কক্ষগুলো তালাবদ্ধ। এ সময় কথা হলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, চিংড়াখালী ইউপির চেয়ারম্যান আক্কাস আলী বুলু ধরাধোয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি নিজের সুবিধার জন্য তার বিদ্যালয়ের পাশেই ধরাধোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের একটি টিনশেড কক্ষে পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করেছেন। ওই কক্ষে বসেই তিনি পরিষদের সব ধরনের কাজ করেন। মূল ভবন থেকে অস্থায়ী এ কার্যালয়ের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। ফলে এত দূরে এসে সংকীর্ণ ঘরে সেবা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ইউনিয়নবাসীকে।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আক্কাস আলী বুলু বলেন, মূলত শারীরিক অসুস্থতার জন্যই তিন কিলোমিটার দূরে নতুন ভবনে গিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এ অস্থায়ী কার্যালয়ের বিষয়ে পরিষদের সব সদস্যের সম্মতিও আছে। তিনি আরো বলেন, ‘২০১৬ সালে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হই। এর পরই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে দীর্ঘদিন ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও পুরোপুরি সুস্থ হইনি। তাছাড়া আমার নিরাপত্তারও অভাব রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই পরিষদের সব সদস্যের সম্মতিতে আমার বিদ্যালয়ের পাশে অস্থায়ী কার্যালয়টি স্থাপন করি।

তবে পাকা ভবন থাকা সত্ত্বেও পরিত্যক্ত ঘরে ইউপি কার্যালয় স্থাপন নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাছির হাওলাদার বলেন, চেয়ারম্যান তার স্কুলের পাশে পরিষদ কার্যলয় করায় আমাদের দীর্ঘ পথ হেঁটে সেখানে যেতে হয়। একই কথা জানান হোসেন শেখ, মনির হোসেন, মাহমুদ মৃধা, রাসেল সরদার, ইয়াছিন কবিরসহ আরো বেশ কয়েকজন। তাদের অভিযোগ, পরিত্যক্ত কক্ষটিতে সবার স্থান সংকুলান হয় না। সেখানে চেয়ারম্যান ও পরিষদের সদস্যরাও আসেন কদাচিৎ। ফলে আমরা সাধারণ মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

এ বিষয়ে চিংড়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলায়েত হাওলাদার বলেন, আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পরিষদে এসে আমাদের প্রয়োজন দেখবেন। সুবিধা-অসুবিধায় পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু পরিষদের এত বড় ভবন থাকা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান সেখানে আসছেন না। পরিষদের সদস্যদের নিয়ে তিনি তার স্কুলের পাশে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে অস্থায়ী কার্যালয় করেছেন। বিষয়টি আমাদের হতাশ করেছে।

বাগেরহাটের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক দেবপ্রসাদ পাল বলেন, চিংড়াখালী ইউয়িন পরিষদে স্থায়ী পূর্ণাঙ্গ ভবন রয়েছে। তার পরও প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন গ্রহণযোগ্য নয়। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে। সব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন