অর্থনীতিতে নোবেল: কারা পাননি- এবার কে বা কারা পাবেন?

মোস্তফা মোরশেদ

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এর কারণ মূলত দুটি। প্রথমত, আলফ্রেড নোবেলের ঠিক করে দেয়া পাঁচটি বিষয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য শান্তির মধ্যে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০০তম বছর পূর্তি উপলক্ষে সুইডিশ ন্যাশনাল ব্যাংক প্রাইজ ইন ইকোনমিক সায়েন্স ইন মেমোরি অব আলফ্রেড নোবেল নামে নিয়মিত নোবেল পুরস্কারের পাশাপাশি এটি ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান ডাচ অর্থনীতিবিদ জান টিনবারজেন নরওয়ের অর্থনীতিবিদ রাগনার ফ্রিশচ।

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়ার ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। ১৯৬০-এর দশকে সুইডেনের জনগণের কল্যাণে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝে দ্বিমত দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে সরকার জয়লাভ করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের মর্যাদা বাড়াতে পুরস্কারের ঘোষণা নিয়ে আসে। অর্থের পরিমাণ পুরস্কার দেয়ার নিয়ম বিবেচনায় এটি অন্যান্য নোবেলের মতো হলেও অনেকে মনে করেন, এটি মূল নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য নয়। আলফ্রেড নোবেলের বংশধররা দীর্ঘদিন ধরে মূল পুরস্কার থেকে এটি বাদ দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের একজন পিটার নোবেল এটিকেকাকের বাসায় কোকিলের ছাবলেও অভিহিত করেছেন।

দুটি কারণের দ্বিতীয়টি হলো, অর্থনীতি এমন এক বিষয় যেখানে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েও নোবেল পুরস্কার পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইউগুন ফামা রবার্ট শিলার দুরকম বক্তব্য দিয়ে ২০১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ফামা যেখানে বলেছিলেন বাজার (মূলত পুঁজিবাজার) সবসময় দক্ষ সেখানে শিলার বলেছেন বাজার দক্ষ নয়। ২০১৮ সালের নোবেল বিজয়ী পল রোমার দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের বিষয়টিকে এন্ডোজেনাস বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের বিষয়টিকে এক্সোজেনাস বলে রবার্ট সলো ১৯৮৭ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৬৯ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রক্রিয়ায় আমার মনে হয় সবচেয়ে সময়োপযোগী স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে গত বছর নোবেল পুরস্কার দেয়ার মধ্য দিয়ে, যেখানে মূলত সামষ্টিক অর্থনীতি মূল আলোচ্য ছিল। ২০১৮ সালের নোবেল জয়ীরা যে জায়গায় প্রবল আগ্রহ তৈরি করেছেন, তা হলো প্রবৃদ্ধি বাজার ব্যবস্থার পরস্পরবিরোধী অবস্থান। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা দ্বন্দ্ব অর্থনীতির পাঠকদের এক ধরনের আনন্দ দান করছে। ডব্লিউ ডি নরডাউস বলেছেন, যদি বাজার তার আপন গতিতে চলে, তাহলে কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যাবে; সুতরাং বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যদিকে পল রোমার বলেছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন কমে আসবে। তবে ২০১৮ সালের নোবেল জয়ীদের দেয়া ধারণা আগামী দিনের অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্কের আরো কিছু বিষয় রয়েছে। ১৮৯৫ সালে শুরু হওয়া বিষয়গুলো মূলত বিজ্ঞানের অংশ, যেখানে অর্থনীতিকে অনেকেই বিজ্ঞান বলতে নারাজ। ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থনীতি মূলত দর্শনতত্ত্ব আর নৈতিকতা যুক্তিনির্ভর একটা বিষয়, যেখানে গণিতের প্রভাব একসময় অনেক কম ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর নতুনরূপে আবির্ভাবে উচ্চতর জটিল মাত্রার গণিত পরিসংখ্যানের প্রভাব বাড়তে থাকে। ফলে অনেকেই মনে করেন, অর্থনীতি তার মূল জায়গা থেকে ক্রমে সরে যাচ্ছে। কয়েক দশক ধরে গাণিতিক মডেলনির্ভর বিশ্লেষণের ওপর অধিক জোর দেয়ায় অর্থনীতি থেকে বিষয়ের মূল উপজীব্যমানুষহারিয়ে যেতে বসেছে। অর্থনীতি মূলত একটি সামাজিক বিজ্ঞান, যেখানে মানুষের জীবনধারণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত চলকগুলোই এর মূল উপাদান। তার পরও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার আজ স্বীকৃত মর্যাদাকর প্রাপ্তি হিসেবে বিবেচিত। একটি গতিশীল বিষয় হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া যেতেই পারে। গণিত যে অর্থনীতির বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে, তা আরো স্পষ্ট হয় যখন আমরা দেখতে পাই অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীদের অন্তত ১৩ শতাংশ অর্থনীতিবিদ গণিতে পিএইচডিধারী, আর অন্তত ৩৩ শতাংশ গণিতে স্নাতক ডিগ্রিধারী।

নারীদের অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ পর্যন্ত ইলিনর অস্ট্রাম নামে মাত্র একজন নারী পুরস্কার পেয়েছেন, যার আলোচনার বিষয় ছিল ইকোনমিকস অব কমন্স। নারীদের সংখ্যা কম হওয়ার একটি বড় কারণ আশি-নব্বইয়ের দশকে অর্থনীতির বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তাদের অংশগ্রহণ কম ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাণিতিক তত্ত্বনির্ভর কাজে তাদের অবদান বাড়ছে। আশা করা হয়, আগামীতে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার নারীদের দখলেই বেশি যাবে। এছাড়া বয়সী

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন