না, ছেলেটিকে আমি চিনতাম না। নামও জানতাম না। দেখা হয়নি কখনো। চিনি না তার পিতাকেও। কিন্তু তবু আবরার ফাহাদকে আমি চিনি। কারণ আমি অভিজিৎ, দীপনদেরও চিনি। পশুত্ব, সহিংসতা ও নৃশংসতার শিকার ওদের কেউ আমার অচেনা নয়। আবরারের বাবাকেও আমি জানি। কারণ অধ্যাপক অজয় রায় আর অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকও আমার চেনা—না, ব্যক্তিগত পরিচিতির কারণে নয়, সন্তান হারানোর পর তাদের মুখাবয়বের সঙ্গে আবরারের পিতার আর্ত মুখের কোনো তফাৎ নেই বলে।
আবরার কি রাজনীতির শিকার, সে কি প্রাণ দিয়েছে মতামতের ভেদাভেদের কারণে, সে কি চলে গেল অন্যের ক্রোধের মূল্য দিতে গিয়ে? আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হলেও আবরার আসলে আত্মাহুতি দিয়েছে নৃশংসতার কাছে, শিকার হয়েছে সহিংসতার, হার মেনেছে পশুত্বের কাছে। যারা আবরারের ওপর চড়াও হয়েছিল, তারা ছাত্র নয়, তারা তরুণ নয়, তারা হয়তো মানুষও নয়; তারা নৃশংসতার ছোরা, তারা সহিংসতার তরবারি, তারা পশুত্বের রাম-দা। ওইদিন শুধু আবরারের প্রাণহানি ঘটেনি, মৃত্যু হয়েছে সহনশীলতার, শুভ বুদ্ধির আর মানবতার।
আমাদের সমাজে ভিন্নতা তো নতুন কিছু নয়। ভিন্নতা রয়েছে সংস্কৃতির, ধর্মের, রাজনৈতিক বিশ্বাসের, আর্থসামাজিক অবস্থানের, জীবনযাপন প্রক্রিয়ার। সে ভিন্নতা নিয়েও আমরা সম্প্রীতির সঙ্গে, সৌহার্দের সঙ্গে, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করেছি যুগ যুগ ধরে। কিন্তু সেই বৈচিত্র্য আমাদের শক্তিশালী করেছে দুর্বল করেনি। বিরোধ কি ঘটেনি তখন, মতানৈক্য কি দেখা যায়নি, সংঘর্ষ কি বাধেনি তখন? সবই হয়েছে। কিন্তু সে সবই আবার মিটিয়ে ফেলা হয়েছে বিবিধ প্রক্রিয়ায়। ভিন্নতা মাত্রেই ভেদাভেদে পরিণত হয়নি।