যুক্তরাজ্যের বড় বড় সুপারমার্কেটকে পণ্য সরবরাহকারী খামার ও প্লান্টেশনগুলোর শ্রমিকরা দারিদ্র্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এ তথ্য জানিয়েছে। খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার জন্য ‘নিরন্তর তাড়না’ দারিদ্র্য, নিপীড়ন ও বৈষম্য বাড়িয়ে চলছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। খবর বিবিসি।
অক্সফাম জানিয়েছে, টেসকো, সেইনসবারি’স ও মরিসনসের মতো সুপারমার্কেটগুলোয় পণ্য জোগান দিচ্ছে এমন খামারগুলোয় চরম অবস্থা বিদ্যমান। যদিও খুচরা বিক্রেতারা লাখ লাখ জীবনের উন্নতির লক্ষ্যে ‘নেতৃস্থানীয় পদক্ষেপ’ নিচ্ছে বলে দাবি জানিয়েছে ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম।
উদীয়মান অর্থনীতি ভারত ও ব্রাজিলে গবেষণা পরিচালনা করেছে অক্সফাম। পাশাপাশি অন্য পাঁচটি দেশের শ্রমিকদের নিয়ে জরিপ চালিয়েছে। আসামের ৫০টি চা বাগানের শ্রমিকরা সংস্থাটিকে জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও নিরাপদ খাবার পানির অভাবে শ্রমিকদের মধ্যে কলেরা ও টাইফয়েড লেগেই থাকে।
মজুরি কম হওয়ায় জরিপে অংশগ্রহণকারী অর্ধেক শ্রমিকের সরকারি রেশন কার্ড রয়েছে। অন্যদিকে নারী শ্রমিকদের নিয়মিত দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত হাড়ভাঙা শ্রম দিতে হয় বলে অক্সফাম জানিয়েছে।
টেসকো, সেইনসবারি’স, মরিসনস ও আলদিসহ সব সুপারমার্কেটই এসব সরবরাহকারকের কাছ থেকেই চা সংগ্রহ করে থাকে। যদিও ব্রিটিশ সুপারমার্কেট আসদার মালিক বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি ওয়ালমার্ট এ ধরনের কোনো কিছু করার কথা নিশ্চিত করেনি আবার অস্বীকারও করেনি।
অক্সফামের গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০০ গ্রাম আসামের কালো চায়ের জন্য ক্রেতারা যে ৭৯ পেন্স ব্যয় করছেন, তার ৪৯ পেন্স পাচ্ছে সুপারমার্কেট ও চা ব্র্যান্ডগুলো আর শ্রমিকরা সব মিলিয়ে পাচ্ছেন মাত্র ৩ পেন্স। সংস্থাটি জানিয়েছে, আসামের চা বাগানের শ্রমিকদের যদি খুচরা মূল্যের আর মাত্র ৫ পেন্স বেশি দেয়া হয়, তবেই তাদের পক্ষে জীবনধারণের মতো জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব।
এদিকে ব্রাজিলের ফলের খামারে কর্মরত শ্রমিকরা অক্সফামকে জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়া কীটনাশক ব্যবহারের কারণে তদের ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আঙ্গুর, তরমুজ ও আমবাগানের নারী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ফসল তোলার মৌসুমের বাইরে তাদেরও সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়।
আর এসব খামারই লিডল, সেইনসবারি’স, টেসকো ও মরিসনসের মতো যুক্তরাজ্যের সুপারমার্কেটগুলোয় ফসল সরবরাহ করে থাকে। এক্ষেত্রে ওয়ালমার্ট বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি।
ফিলিপাইন, একুয়েডর, কোস্টারিকা, পেরু ও যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচশতাধিক শ্রমিককে নিয়ে অক্সফামের একটি পৃথক জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ শ্রমিকই খাবার ও আবাসনের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো যথেষ্ট মজুরি না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এক-তৃতীয়াংশের বেশি জানিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে কোনো আঘাত বা দুর্ঘটনাজনিত সুরক্ষা তাদের নেই এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের সময় তাদের টয়লেটে যাওয়ার বা পানি খাওয়ার বিরতিও দেয়া হয় না।
সুপারমার্কেটগুলোর সরবরাহ শৃঙ্খলের এ শোষণকে ‘সর্বজনীন’ বলে উল্লেখ করেছেন অক্সফামের এক মুখপাত্র।
অক্সফামের নৈতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপক র্যাচেল উইল’স বলেন, কিছু শুভচর্চার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সুপারমার্কেটগুলোর নিরন্তর মুনাফার আকাঙ্ক্ষা তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে দারিদ্র্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘন জিইয়ে রেখেছে।
এ ধরনের শোষণ বন্ধ, সব শ্রমিককে জীবিকা নির্বাহের মতো মজুরি, নারীর ক্ষেত্রে ন্যায্য চুক্তির নিশ্চয়তা ও পণ্যের উৎস সম্পর্কে আরো স্বচ্ছতার জন্য সুপারমার্কেটগুলোকে আরো বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।