ক্রেডিট সুইসের অর্থনীতিবিদদের মতে, ইউরোপের নতুন ‘সিক ম্যান’ জার্মানি। মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক বাণিজ্যের শ্লথগতি জার্মান অর্থনীতিকে মন্দার দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। খবর ফক্সবিজনেস।
ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের লন্ডনভিত্তিক অর্থনীতিবিদদের একটি দল বলছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যের চলমান শ্লথগতি জার্মানির অর্থনীতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একসময় ইউরো-অঞ্চলের অর্থনীতিতে সবচেয়ে ভালো করা দেশটি এখন আশঙ্কাজনকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। দেশটির বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা বোঝা তৈরি করছে।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জার্মানির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, যা ছয় বছরের বেশি সময়ের মধ্যে দুর্বলতম। প্রান্তিক থেকে প্রান্তিক হিসাবে সংকোচন ঘটেছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে জার্মানি ইউরোপের একমাত্র বড় অর্থনীতি, যার অর্থনীতির সংকোচন ঘটেছে।
এদিকে জার্মানি ও ইউরোপকে বড় ধাক্কা দিয়েছে এয়ারবাসকে নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সর্বশেষ রায়। ফরাসি উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাসকে অন্যায্য ভর্তুকি দেয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে ডব্লিউটিওর কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে ইইউ পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপে সম্মতি দিয়েছে ডব্লিউটিও।
এয়ারবাসকে দেয়া সরকারি ভর্তুকির বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওর কাছে ওয়াশিংটনের দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাটির আরবিট্রেশন প্যানেল যুক্তরাষ্ট্রকে ইইউর পণ্য ও সেবার ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের পক্ষে রায় দিয়েছে। আরবিট্রেশন প্যানেলের রায়ে বলা হয়েছে, ব্রাসেলস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারগুলোর এয়ারবাসকে দেয়া ভর্তুকির বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওর নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
ডব্লিউটিওর অনুমোদনের পর পরই ৭৫০ কোটি ডলার সমমূল্যের ইইউ পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৮ অক্টোবর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। এ শুল্কারোপ কার্যকর হলে ওয়াইন ও কফির মতো জার্মানির পণ্যের দাম বেশ বেড়ে যাবে, যা এরই মধ্যে সংকটে পড়া অর্থনীতিটিকে আরো বিপাকে ফেলবে।
তবে এও ঠিক যে ডব্লিউটিওর আদেশ দেয়ার আগে থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল, পরিস্থিতি আগামী দিনে আরো খারাপ হতে যাচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে গ্রাহকদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক নমুরার লন্ডনভিত্তিক অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো দ্বিতীয় প্রান্তিকে জার্মানির জিডিপি সংকুচিত হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী দিনে অর্থনীতিটির আরো সংকোচন ঘটতে যাচ্ছে।
তবে ভালো সংবাদ হলো, জার্মানির যন্ত্রণা ইউরোপের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়বে না বলে জানিয়েছেন ক্রেডিট সুইসের অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলছেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিরাট কারেন্ট অ্যাকাউন্ট উদ্বৃত্ত জার্মানির, যা চলতি বছর ২৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রফতানি বৃদ্ধি এবং স্থানীয় চাহিদার দুর্বলতার দরুন কম আমদানির কারণে এটি হয়েছে। ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য জার্মানি দুর্বল ব্যয় প্রবণতা নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ নয়।
ক্রেডিট সুইসের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) নেয়া প্রণোদনা পদক্ষেপ অঞ্চলটির অর্থনীতিগুলো বড় সাহায্য করতে পারে।
ক্রেডিট সুইস বলছে, দুটি বিষয় জার্মানির সমস্যার সমাধান করতে পারে। একটি হলো মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ইতি ঘটা এবং অন্যটি হলো জার্মান আর্থিক প্রণোদনা পদক্ষেপ।
যেহেতু মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের সমাধানের বিষয়টি জার্মানির নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাই দেশটি আর্থিক প্রণোদনা পদক্ষেপের দিকে ঝুঁকতে পারে। কিন্তু তবে নমুরার অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদিও অর্থনীতিকে সহায়তা করার মতো ‘ফিসকল ফায়ারপাওয়ার’ জার্মানির রয়েছে, তবে ‘একটি সুষম বাজেট তৈরির নীতিগুলোর’ কারণে সম্ভবত দেশটি সে পথে হাঁটবে না।
হোয়াইট হাউজের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কুদলো বলেন, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের উচিত ব্যক্তি ও করপোরেট উভয় কর কমানো এবং কর-সংক্রান্ত কঠোর নিয়মকানুন শিথিল করা। ফ্রান্সও সম্প্রতি ব্যক্তি ও করপোরেট কর কমিয়েছে।