সংকুচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য

বণিক বার্তা প্রতিনিধি কক্সবাজার

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা, মিয়ানমারের অসহযোগিতা ও বাণিজ্য বাড়াতে সরকারি কার্যকর উদ্যোগের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ৭০ হাজার ৪২৫ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭০ হাজার ৬৯৭ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭২ হাজার ১৭৭ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৩ টন ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৩ হাজার ৬৮৩ টন।

বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যে সুবিধা করতে পারছেন না, যার প্রমাণ মেলে রফতানি পরিসংখ্যানে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারে পণ্য রফতানি হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ২২৮ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৬৭ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৮২ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ৭২৫ টন ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৬৪ টন।

বিওটি ভিত্তিতে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, সীমান্তে উত্তেজনার কারণে বাণিজ্য একটু কমে গেছে। রোহিঙ্গা সংকটের জন্য দুই দেশের ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করতে না পারার কারণে দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা করতে চান। এজন্য সড়ক, আকাশ ও নৌপথে যোগাযোগ অপরিহার্য। টেকনাফ-ইয়াঙ্গুন-কুনমিং ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে এশিয়ান হাইওয়ের যোগাযোগ চালু করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই উদ্যোগ নিতে হবে। মিয়ানমারের কাছে এখন আমেরিকা, চীন, ভারতসহ বিশ্বের বড় বড় দেশ বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের কথা চিন্তা করার মতো সময় তাদের নেই।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কৃষি, শিল্প, জ্বালানি ও আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে অসীম সম্ভাবনা থাকার পরও এখনো দুই দেশের সম্পর্কের মাঝে রয়েছে বিশাল প্রাচীর। চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের সঙ্গে মিয়ানমারের কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলেও বাংলাদেশের তেমন নেই। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ না নেয়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে।

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানির পরিমাণ কমছে। তাই এ ব্যাপারে এখনই যথাযথ উদ্যোগ না নিলে আগামী এক বছরের মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রধান রুট টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য আরো সংকুচিত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে ২০০৩ সালের ৫ নভেম্বর টেকনাফ স্থলবন্দর চালু করা হয়। এ বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা মূলত মাছ, আদা, সুপারি, মাষকলাই, আচার, শুকনো বরই, তেঁতুল, শিমের বীজ, বিভিন্ন প্রকার ডাল, ছোলা, মসলাজাতীয় পণ্য, শুঁটকি মাছ, বাঁশ, বেত, রাবার, কাঠ প্রভৃতি আমদানি করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে সিমেন্ট, রড, প্রসাধনসামগ্রী, হাঙ্গর, কচ্ছপের খোলস, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, সেমাই ইত্যাদি রফতানি হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন