অস্ট্রেলিয়া থেকে গম আমদানি কমায় বিপাকে ইন্দোনেশিয়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইন্দোনেশিয়ার আমদানীকৃত খাদ্যশস্যের অন্যতম গম। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে দেশটি প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গম আমদানি করে। কিন্তু চলতি বছর খরার কারণে দেশটি থেকে গম আমদানি কমেছে। বিকল্প বাজার হিসেবে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের দেশগুলো থেকে আমদানি বাড়িয়েছে দেশটি। তবে অস্ট্রেলিয়ার গমের মানের তুলনায় এটি অনেক নিম্নমানের। ফলে আটা-ময়দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং খাতসংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সব মিলিয়ে নিম্নমানের এসব গম এখন ইন্দোনেশিয়ার জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

চলতি বছর ইন্দোনেশিয়ার বাজারে অস্ট্রেলিয়ার গম রফতানি গত পাঁচ বছরের গড়ের ৭৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। যেখানে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলগুলো থেকে ইন্দোনেশিয়ায় গম রফতানি ১৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টনে।

চলতি মাসের ২ তারিখে শস্য খাতসংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের কনফারেন্সে ইন্দোনেশিয়ান ফ্লাওয়ার মিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএফএমএ) পক্ষ থেকে আমদানীকৃত গমের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

আইএফএমএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার গম থেকে তৈরি হয়েছে এমনটি বোঝাতে ইন্দোনেশিয়ার নুডুলস কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যে পরিষ্কারক সামগ্রী এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে, যা ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করছে। অস্ট্রেলিয়ার গম থেকে তৈরি নুডলস উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। সে কারণেই ভোক্তাদের পক্ষ থেকে নিম্নমানের গম দিয়ে তৈরি ঘোলাটে রঙের নুডলস নিয়ে অভিযোগ আসছে।

বগাসারি ফ্লাওয়ার মিলসের উপপরিচালক ও আইএফএমএর প্রতিনিধি এরউইন সুধারমা জানান, অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘ খরার কারণে গম আমদানি কমেছে। দেশটির সরবরাহ সংকটে পণ্যটির দাম বেড়েছে। আগামী বছরেও দেশটিতে উৎপাদন কম হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী বছর দেশটিতে ১ কোটি ৭০ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে উৎপাদন হয় ২ কোটি ৫০ লাখ টন। ফলে ইন্দোনেশিয়ায় দেশটির রফতানি আগামী বছর কমতির দিকে থাকবে।

বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে ইন্দোনেশিয়া গম আমদানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিলের (আইজিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ উৎপাদন মৌসুমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ১ কোটি ৩৩ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে। যেখানে চাহিদা মোকাবেলায় দেশটিতে আমদানির প্রয়োজন হতে পারে ১ কোটি ১৭ লাখ টন।  

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) অ্যাটাসির তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহের জন্য ইন্দোনেশিয়া গমের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল।

অ্যাটাসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি খাতসংশ্লিষ্ট একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় বর্তমানে ২৩টি কোম্পানির অধীনে ২৮টি আদা-ময়দার কারখানা রয়েছে। যাদের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ টন। যেখানে ২০১৭-১৮ মৌসুমে সক্ষমতা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ টন। যে কারণে দেশটিতে এখন গমের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় ভুট্টার দাম বৈশ্বিক বাজারের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। সে কারণে দেশটির মিলাররা ভুট্টার পরিবর্তে গমের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছেন।

সুধারমার মতে, অস্ট্রেলিয়া থেকে গম আমদানি কমে যাওয়ায় কৃঞ্চ সাগরীয় দেশগুলো থেকে কম মূল্যে গম আমদানি করা ছাড়া এখন মিলারদের কাছে বিকল্প কোনো পথ নেই। এমনকি এ বছর আর্জেন্টিনা থেকেও গম আমদানি হতে পারে। এছাড়া ভোক্তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা পূরণ করতে পারায় খরা কাটিয়ে আবার অস্ট্রেলিয়ার গম ইন্দোনেশিয়ার বাজার ধরতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন তিনি।

 

            সূত্র: ফিনান্সিয়াল রিভিউ ও ওয়ার্ল্ড গ্রেইন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন