অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আলহাজ টেক্সটাইলের কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি মূলধনের তীব্র সংকটে থাকা আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে অবিক্রীত সুতার মজুদ। কারখানায় উৎপাদিত সুতা বিক্রি না হওয়ায় পণ্যটির মজুদ এত বেশি হয়েছে যে কোম্পানিটির গুদামে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এ অবস্থায় কোম্পানিটি নতুন করে সুতা উৎপাদনে যেতে পারছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রথমে এক মাসের জন্য আলহাজ টেক্সটাইলের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আরো পাঁচ দফায় কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু মোট ১১৫ দিন কারখানা বন্ধ রাখা হলেও কোম্পানিটির সুতা বিক্রিতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আলহাজ টেক্সটাইলের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

এছাড়া এ লে-অফের আওতাভুক্ত শ্রমিক ও কর্মচারীদের বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৬(৭) ধারার অনুবলে আইনটির ২০(২)(ক) ধারা অনুযায়ী চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুতা বিক্রি পরিস্থিতিতে উন্নতি হলে কারখানা আবার চালু করা হবে এবং ছাঁটাইকৃত শ্রমিক ও কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলহাজ টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. শওকত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, সুতা বিক্রিতে অগ্রগতি না হওয়ায় বাধ্য হয়েই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও কর্মচারীদের শ্রম আইন অনুযায়ী ছাঁটাই করা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে কারখানায় ফের উৎপাদন শুরু করা হবে। শ্রমিক-কর্মচারীরাও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের চাকরি ফেরত পাবেন।

এ কর্মকর্তা আরো জানান, আলহাজ টেক্সটাইলের পক্ষ থেকে স্টকে থাকা সুতা বিক্রির জন্য বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও চাহিদা না থাকায় তারা বাড়তি সুতা কিনতে রাজি হয়নি। বর্তমানে কোম্পানিটির গুদামে প্রায় ৮৫০ টন সুতা মজুদ রয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, প্রথম দফায় চলতি বছরের ২৫ জুন থেকে ৩০ দিনের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় আলহাজ টেক্সটাইল। এক মাসেও বিক্রিতে কোনো ধরনের অগ্রগতি না হওয়ায় ৮ আগস্ট পর্যন্ত আরো ১৫ দিনের জন্য কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে বর্ধিত মেয়াদ শেষেও কোম্পানিটির উৎপাদিত মজুদ সুতা অবিক্রীত থাকায় পরবর্তী সময়ে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আরো ১৫ দিনের জন্য কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়ায় কোম্পানিটি। এর পরও সুতা বিক্রিতে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তৃতীয় দফায় ২৪ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর, চতুর্থ দফায় ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ও পঞ্চম দফায় ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় আলহাজ টেক্সটাইল।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৮ পয়সা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে কোম্পাটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৩ পয়সা, যেখানে আগের হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে ইপিএস ছিল ৪২ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১০ টাকা ৮৩ পয়সা, যা আগের বছরের ৩০ জুন ছিল ১২ টাকা ৩৮ পয়সা।

২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে আলহাজ টেক্সটাইল। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪৮ পয়সা। ৩০ জুন এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১২ টাকা ৩৮ পয়সা।

গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আলহাজ টেক্সটাইল লিমিটেডের পাওনা ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে অগ্রণী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ৪ এপ্রিলের মধ্যে আলহাজ টেক্সটাইলকে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশ অনুসারে ব্যাংক কোম্পানিটিকে এ অর্থ পরিশোধ করে। সর্বশেষ গত ৭ মে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংককে আলহাজ টেক্সটাইলকে আরো ১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। সে নির্দেশনা অনুসারে ব্যাংক তা কোম্পানিটিকে পরিশোধ করেছে। সব মিলিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কাছ থেকে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পেয়েছে আলহাজ টেক্সটাইল।

আলহাজ টেক্সটাইলের অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন প্রায় ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারসংখ্যা ২ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৪৯, যার মধ্যে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। এছাড়া সরকারের কাছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১২ দশমিক ৯৭ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৭৪ দশমিক ২২ শতাংশ রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আলহাজ টেক্সটাইলের শেয়ার সর্বশেষ ৪৮ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৪২ টাকা ৮০ পয়সা ও ১২৩ টাকা।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ১১০ দশমিক ৭।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন