শিক্ষার্থীদের ‘প্রায় সব’ দাবির সঙ্গে আমি একমত, কিন্তু...: বুয়েট ভিসি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে (২১) পিটিয়ে হত্যার ঘটনার দ্রুত বিচারসহ ৮ দফা দাবি শুনেছেন জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের দাবিগুলো দেখেছি। এই দাবিগুলোর ‘প্রায় সবগুলোর’ সঙ্গে আমি একমত। এর মধ্যে আমার হাতে যেসব আছে সেগুলো সবগুলোই আমি বাস্তবায়ন করবো। বাকীগুলো উপরমহলে কথা বলে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।

আবরার হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘসময় ক্যাম্পাসে উপচার্যের অনুপস্থিতি এবং জানাজায় উপস্থিত না হওয়া- শিক্ষাথীসহ শিক্ষকদের অনেকেই এর তীব্র সমালোচনা করেন। শিক্ষার্থীদের দেয়া আটটি দাবিতেও ভিসিকে ক্যাম্পাসে এসে বিভিন্ন বিষয়ে জবাবদিহির আল্টিমেটাম ছিল। 

এর আগে ঘটনার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মঙ্গলবার বিকেলে ক্যাম্পাসে এসেই ডিনদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উপাচার্য। এরপর বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এসময় কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা না মেনে উপাচার্যকে সবার সামনেই জবাবদিহিতার আহ্বান জানান। এসময় ভিসি বাইরে না আসায় তাকে কার্যালয়ের মধ্যে রেখেই কার্যালয়ের মূল ফটক এবং পেছনের ফটকে একাধিক তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। তারা ভিসিকে ভেতরে রেখে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেন।

ফটকের সামনে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে ‘ভিসি স্যার নীরব কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘প্রশাসন নীরব কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, ভিসি স্যার ভেতরে’, ‘হইহই রইরই, ভিসি স্যার গেল কই’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।

পরে ৬টার দিকে ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম নিচে নেমে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় ভিসি বাইরে এসেই বলেন, ‘আমি তোমাদের অভিভাবক। তোমরা আমার সন্তানের মতো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এরকম একজন মারা গেছে। ...’ এসময় শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে ‘মারা গেছে’ নয় ‘খুন করা হয়েছে’ বলার দাবি করেন।

পরে উপাচার্য তাদের কথা মেনে নিয়ে বলেন, আবরারকে হত্যা করা হয়েছে এতে সন্দেহ নেই।

তিনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তোমাদের জন্যই কাজ করছিলাম। আমি সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করছিলাম। আমি সব জায়গায় যোগাযোগ না করলে এত দ্রুত অ্যাকশন হতো না।... আমি কোন অন্যায় করিনি, তোমাদের জন্যই কাজ করছিলাম।

ভিসি বলেন, আমি তোমাদের প্রায় সব দাবির সঙ্গেই একমত, কিন্তু এজন্যে বসতে হবে। কীভাবে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়- এটা নিয়ে আলোচনার জন্য বসতে হবে।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা এমন আশ্বাস না মেনে ভিসিকে নির্দিষ্ট করে বলতে বলেন কোন কোন দাবি মানা সম্ভব। দরকষাকষির এক পর্যায়ে কোন সুরাহা ছাড়াই ভিসি আবার কার্যালয়ের ভেতরে চলে যান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টার সময় পর্যন্ত ভিসি কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী আবরারের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে বেদম প্রহার করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। কুষ্টিয়ার ছেলে আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বর্তমানে একটি এনজিও সংস্থায় কর্মরত। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকতা করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন