দেশের বিদ্যুৎ খাতের প্রথম ও সবচেয়ে বড় স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (আইপিপি) সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩ কোটি ডলারে কিনেছে জাপানের জ্বালানি খাতের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান জেরা। চলতি বছরের মে মাসে জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ বিনিয়োগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। এর চার মাসের মাথায় জেরা সামিট পাওয়ারের শেয়ার কিনল। গতকাল জেরার পক্ষ থেকে সামিটের শেয়ার কেনার বিষয়টি জানানো হয়েছে।
শেয়ারহোল্ডার হিসেবে জেরা দক্ষতার
সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিচালনার মাধ্যমে সামিট পাওয়ারের করপোরেট ভ্যালু বাড়াতে
সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধিতেও এ বিনিয়োগ অবদান রাখবে। ২০১৬ সাল থেকে সামিটের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে
বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), আইএফসি
ইমার্জিং এশিয়া ফান্ড ও ইএমএ পাওয়ারের বিনিয়োগ ছিল। জাপানি প্রতিষ্ঠান জেরার
অন্তর্ভুক্তির পর এ তিন প্রতিষ্ঠান সামিটের শেয়ার ছেড়ে দেবে। তবে ঋণদাতা হিসেবে
সামিটের সঙ্গে আইএফসির সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
সামিটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
মুহাম্মদ আজিজ খান এ বিনিয়োগ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের
দ্রুত ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও
বিনিয়োগ জেরার এ বিনিয়োগের মাধ্যমে সহজলভ্য হবে। কারণ তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও
বিনিয়োগ সক্ষমতা রয়েছে। জেরা সবদিক দিয়েই আমাদের সেরা অংশীদার হতে পারে। এ
অংশীদারিত্ব আমাদের ২০২২ সালের মধ্যে দেশে ৩০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা
অর্জনে সহায়ক হবে।
জেরা-এশিয়ার সিইও তোসিরো কুদামা এ
বিনিয়োগের বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
এ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জেরা
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সামিটের সঙ্গে কাজ করবে। জাতীয়
পর্যায়ে সামিটের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সক্ষমতার প্রতি আমাদের ্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
ভবিষ্যতে আমরা সামিটের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখব। আমরা সামিটের সঙ্গে মিলে
বাংলাদেশের জন্য শুধু নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনই করব না, পাশাপাশি
প্রাথমিক জ্বালানিও সরবরাহ করব। জেরার লক্ষ্য হলো, বিশ্বের জ্বালানি খাতের অন্তর্নিহিত
সমস্যার সর্বাঙ্গীণ সমাধান দেয়া। শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হওয়ার ক্ষেত্রে জেরা সামিটকে
অভিজ্ঞ মানবসম্পদ ও কারিগরি সহায়তা দেবে।
বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএফসি
উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর বেসরকারি খাতে অর্থায়ন করে থাকে। আইএফসি ইমার্জিং
এশিয়া ফান্ডের কো-হেড এন্ডু ইয়ে বলেন,
আমাদের গত তিন বছর সামিট পাওয়ার
ইন্টারন্যাশনালের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য হয়েছে। এ সময়ে দৃশ্যমান
অগ্রগতির জন্য সামিটকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এসেছে। নতুন
বিনিয়োগকারী এ বাজারে সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছে দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা
সামনের দিনগুলোয় সামিট ও জেরার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
প্রসঙ্গত, সামিটের
বর্তমানে ১ হাজার ৯৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে
কোম্পানিটির একটি ৫৮৩ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। এছাড়া আরো ৩
হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি পরিকল্পনাধীন। এছাড়া এলএনজি, অপটিক্যালস
ফাইবার নেটওয়ার্ক ও বন্দর পরিচালনা খাতেও সামিটের ব্যবসা রয়েছে। সামিট গ্রুপের
প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত। অন্যদিকে জেরা একটি
বৈশ্বিক জ্বালানি কোম্পানি। জাপানের বিদ্যুৎ খাতের প্রধান দুটি কোম্পানি টেপকো
ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার ইনকরপোরেটেড ও চুবু ইলেকট্রিকের সমবিনিয়োগের মাধ্যমে যৌথ
মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৫ সালে জেরার যাত্রা হয়। জাপানে জেরা ২৬টি
বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালনা করছে,
যার মিলিত সক্ষমতা ৬৭ গিগাওয়াট। বিশ্বের
অন্যান্য দেশে বাস্তবায়নাধীনসহ জেরার প্রায় ১০ গিগাওয়াটের প্রকল্প রয়েছে।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের জন্য
শেয়ারহোল্ডারদের ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে সামিট পাওয়ারের
পরিচালনা পর্ষদ। সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশসহ
অন্যান্য এজেন্ডা পর্যালোচনার জন্য আগামী ২৪ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর খামারবাড়িতে
অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ
(কেআইবি)
কমপ্লেক্সে কোম্পানিটির ২২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান
করা হয়েছে। এসংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ অক্টোবর।
সমাপ্ত হিসাব বছরে সামিট পাওয়ারের
শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪ টাকা ৭৮ পয়সা,
আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৪ টাকা ৪০ পয়সা। ৩০ জুন
শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য
(এনএভিপিএস)
দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৪০ পয়সা, ২০১৮
হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৩১ টাকা ২৬ পয়সা।
২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের
জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় সামিট পাওয়ার। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ৪
টাকা ৪০ পয়সা। ২০১৭ হিসাব বছরের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির
শেয়ারহোল্ডাররা। ১৮ মাসে সমাপ্ত ওই হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৫ টাকা ৭৫
পয়সা।
২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত
কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৬৭
কোটি ৮৮ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ১ হাজার ৫৬৭ কোটি ১৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। কোম্পানির
মোট শেয়ারের ৬৩ দশমিক ১৮ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে,
২১ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ৩
দশমিক ৬৫ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বাকি ১২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সাধারণ
বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের
ভিত্তিতে শেয়ারটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ৯ দশমিক ৩৯, অনিরীক্ষিত
আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ৮ দশমিক ৬৪।