সম্প্রীতির বন্ধনে সর্বজনীন হয়ে উঠেছে শারদোৎসব

সুকুমার চৌধুরী

দেশের হাজারো পূজামণ্ডপের মাঝে অন্যতম প্রধান পূজামণ্ডপ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সহজ কথা নয়। আমরা যখন গুলশান-বনানী পূজামণ্ডপে পূজার আয়োজন শুরু করলাম, সে সময়টা কঠিন ছিল। সবকিছুই নতুন করে শুরু করতে হচ্ছিল। ২০০৮ সালে যখন বনানী মাঠে পূজা আয়োজনের অনুমতি মেলে, তখন মাঠ প্রস্তুত ছিল না। একেবারে তড়িঘড়ি করে শেষ সময়ে প্রতিমাসহ অন্যান্য বিষয় প্রস্তুত করা হয়। তার পরও তখন সেটি কম সাড়া ফেলেনি। দিন দিন সে পরিধি বাড়িয়েছি। সবার সহযোগিতায় দেশের অন্যতম পূজামণ্ডপ হয়ে উঠেছে গুলশান-বনানী পূজামণ্ডপ। পূজার সময় সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত-দর্শনার্থী আসছেন। সব ধর্মের লোক সম্প্রীতির বন্ধনে মিলছে। এটা আয়োজক হিসেবে আমাকে অন্য রকম সুখ দেয়। আমার হাত ধরে এ মণ্ডপের যাত্রা, তাই আমার সুখটাও একটু বেশি।

রাজধানীর দুর্গা পূজাগুলোয় ভিড় বাড়ে বিষয়বস্তুর অভিনবত্বের ফলে। অনেক মণ্ডপে প্রধান থিম কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আবার কখনো বিশেষ ধাতুর প্রতিমা বা কোনো বিশেষ আবহ। সে বিষয়টি গুলশান-বনানী পূজা ফাউন্ডেশন শুরু থেকেই নজর দিয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা সেটিকে ভক্ত-দর্শনার্থীর কাছে আরো সময়োপযোগী করে তোলার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি পূজায় অন্য রকম আবহ পেয়েছে গুলশান-বনানী পূজামণ্ডপ। ভক্ত-দর্শকদের কাছেও সাড়া মিলছে প্রচুর। বিশেষ করে প্রতিমায় প্রাণ পাওয়ার বিষয়টি অনেক মণ্ডপেই অনুপস্থিত থাকে। কিন্তু গুলশান-বনানী পূজায় প্রতিমার চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায়।

দিন দিন বিভিন্ন ধরনের আলো ও সংগীতের মাধ্যমে পূজার দিনগুলোয় অন্য চেহারা দেয়ার বিষয় যুক্ত হয়েছে। সেটির দিকে নজর দিয়ে দেশের প্রায় সব মণ্ডপে আলাদা বাজেট রাখা হয়। দিন দিন পূজা উদযাপনের পরিসর ও দিক যে বাড়ছে, এটি কিন্তু তারই জানান দেয়।

দেশে এবার মণ্ডপের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। এটি সুখবর বলা যায়। একসময় পূজা শুরুর আগেই দেশের নানা স্থানে ঘটে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা। সে সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবারো ঘটেছে, তবে তা উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। মানুষ দিন দিন সম্প্রীতির বিষয়ে আরো সজাগ হচ্ছে। উসবটা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আত্মচাহিদা বাড়ছে।

শহর ও গ্রামের পূজামণ্ডপকে আলাদা করে দেখার দিনও পুরনো হয়ে গেছে। ছেলেবেলায় গ্রামে যারা কাটিয়েছে তারা বলতে পারবেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন ছিল। সেই ধারা নগর জীবনেও ফিরে আসছে। নগরে মাঝরাত পর্যন্ত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পূজা পালনের মধ্য দিয়ে যে মেলবন্ধন, তা সম্প্রীতির জোরালো ভিতের কথাই বলে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পূজা নির্বিঘ্ন করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক সরকার সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়ে উসবে নিরাপত্তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এটা তারই ফলশ্রুতি। আমরা মনে করি, শেখ হাসিনা সরকার মৌলবাদী জঙ্গিদের উচ্ছেদে যেজিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন, তার ফলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির যেমন উন্নতি হয়েছে, সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো হয়েছে।

 

সুকুমার চৌধুরী: গুলশান-বনানী পূজা উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন