উইকিপিডিয়ায় জমে উঠেছে চীন-তাইওয়ান সাইবার যুদ্ধ

বণিক বার্তা ডেস্ক

হোয়াট ইজ তাইওয়ান?’ লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিন। উইকিপিডিয়া আপনাকে চটজলদি উত্তর জানাবে, তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে রয়েছে চীন, জাপান, ফিলিপাইনের নাম। অথচ সেপ্টেম্বরের শুরুতেও একই প্রশ্নের উত্তরে উইকিপিডিয়া জানিয়েছিল, তাইওয়ান চীনের অন্তর্গত একটি প্রদেশ।

মাস পেরোতেই সেই প্রদেশ এখন একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। না, গত এক মাসের মধ্যে চীনের সঙ্গে কোনো সশস্ত্র যুদ্ধ করে তাইওয়ান স্বাধীনতা অর্জন করেনি। তবে চীন-তাইওয়ানের অঘোষিত যুদ্ধ চলছে উইকিপিডিয়ায়। আর এ সাইবার যুদ্ধের কারণেই উইকিপিডিয়া তাইওয়ানকে একবার চীনের প্রদেশ, আর একবার রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করছে।

উইকিপিডিয়া একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে যে কেউ তথ্য সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জন করতে পারেন। আর যারা এসব কাজে যুক্ত থাকেন তাদেরউইকিপিডিয়ানস বলা হয়। প্লাটফর্মটির উন্মুক্ততার সুযোগ নিয়েই সাইবার যুদ্ধে মেতেছে চীন ও তাইওয়ানের উইকপিডিয়ানসরা। একের পর এক পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন নানা তথ্যে।

এ বিষয়ে তাইওয়ানের উইকিপিডিয়ানস জ্যামি লি বলেন, এটা বেশ অস্থির একটি বছর। বছরের শুরু থেকেই চীনা ও তাইওয়ানিজ উইকিপিডিয়ানসরা তথ্য পরিবর্তনের যুদ্ধে মেতেছেন। একের পর এক আঘাত-পাল্টা আঘাত হানছেন। তবে চীনা বিপ্লবের ৭০ বছর পূর্তি ও হংকংয়ে চীনবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে এ সাইবার যুদ্ধ ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।

তিনি আরো জানান, উইকিপিডিয়ায় তথ্য বদলে ফেলার ক্ষেত্রে চীনের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন উইকিপিডিয়ানসরা। দেশটি এসব উদ্যোগের আওতায় নিজস্ব মতাদর্শ ও চিন্তা-চেতনার বাইরে বিশ্বাসীদের আঘাত করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। বিশেষত তাইওয়ান, হংকং ও ম্যাকাওয়ের উইকিপিডিয়ানসরা চীনাদের সাইবার আক্রমণের শিকার হন। সাইবার হামলার মধ্য দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার মতোও ঘটনা ঘটেছে।

একই পরিস্থিতি হংকংয়ের ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি চীনা বিপ্লবের ৭০ বছর পূর্তিকে ঘিরে বেইজিং যখন বিশ্ববাসীকে সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করতে ব্যস্ত, তখন হংকংয়ে চীনবিরোধী বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। সেই পরিস্থিতিতে হংকং বিক্ষোভের উইকিপিডিয়া পেজে একদিনে ৬৫ বার সংশোধন ও পাল্টা সংশোধনের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি আইফোনের ইমোজি থেকে তাইওয়ান, হংকং ও ম্যাকাওয়ের পতাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে উইকিপিডিয়ায় চীনসংক্রান্ত ২২টি রাজনৈতিক আর্টিকেলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ বার পরিবর্তন-পাল্টা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত চায়না ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং গ্রুপের কর্মকর্তা জি দিয়াং বলেন, ‘উইকিপিডিয়ায় চীনা রাজনৈতিক মতাদর্শসংক্রান্ত তথ্য সুবিন্যস্ত অবস্থায় নেই। আর এ কারণেই নানা ঝামেলা তৈরি হয়।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সিনিয়র ফেলো শার্লি জে উ বলেন, চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতি। সামরিক শক্তিতেও দেশটি অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এ কারণে রাজনৈতিক ইতিহাস রচনায় দেশটি নিজস্ব মতাদর্শের প্রয়োগ দেখতে আগ্রহী। এসব কারণে চীনা নেটিজেনরা সাইবার জগতে নিজস্ব মতাদর্শ ও রাজনৈতিক বিশ্বাস ছড়াতে ভূমিকা রাখছে।  

ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের ডিজিটাল কালচার বিষয়ের সিনিয়র লেকচারার হেদার ফোর্ড বলেন, তাইওয়ান কিংবা হংকংয়ের নেটিজেনদের সঙ্গে চীনা নেটিজেনদের বিরোধ নতুন কোনো ঘটনা নয়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে আমি অবাক হচ্ছি, এ বিরোধ এখন রীতিমতো সাইবার যুদ্ধে রূপ নিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন