বর্তমানে বার্ষিক দশমিক ৭৭ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এছাড়া পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ উপকূলীয় এলাকার ১৭ শতাংশ কৃষিজমি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তলিয়ে যাবে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে চাষযোগ্য জমির সংকট দেখা দেবে
স্বাধীনতার সময় দেশে মোট আবাদযোগ্য জমি ছিল ৯০ লাখ হেক্টর আর জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। দানাদার শস্যের উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি টন। সময়ের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। নির্মাণ হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্যবসাক্ষেত্র, শিল্প-কারখানা এবং প্রসারিত হয় আবাসিক এলাকা ও রাস্তাঘাট। বর্তমানে বার্ষিক দশমিক ৭৭ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এছাড়া পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ উপকূলীয় এলাকার ১৭ শতাংশ কৃষিজমি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তলিয়ে যাবে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে চাষযোগ্য জমির সংকট দেখা দেবে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭৯ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য কৃষিজমি রয়েছে। কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদনে নিবিড়তা এরই মধ্যে ২১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সবজি ও ফল চাষে কৃষিজমি বর্ষব্যাপী ব্যবহূত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর উপকূলে প্রাপ্ত নতুন ভূমিতে ফসল আবাদের সম্ভাবনাও তেমন উজ্জ্বল নয়। সার্বিক দিক বিবেচনায় নগর কৃষি ও উল্লম্ব কৃষি উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহর, ৬৪টি জেলা শহর, ৪৯৫টি উপজেলা শহর আছে। যেখানে বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগোষ্ঠী পাকা বাসস্থান গড়ে তুলেছে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহু প্রতিষ্ঠান। সরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন কিংবা গৃহস্থালি এলাকায় পতিত জমি আছে। প্রতিষ্ঠান বা বাড়ির ছাদেও ফাঁকা এলাকা বিদ্যমান। অনায়াসেই শহুরে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে নগর কৃষি উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করা যায়। সেখান থেকে উৎপাদিত সবজি, ফল, প্রোটিন (মাছ, ডিম, পোলট্রি) পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ কৃষিজমিতে আবহাওয়াগত কারণে বর্ষব্যাপী ফসল উৎপাদন সম্ভব হয় না। কৃষিজমি কমে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও ফসল উৎপাদন সম্ভব হয় না। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, বর্ধিত খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান ও বেকারত্ব হ্রাসের জন্য খামার ও পারিবারিক পর্যায়ে উল্লম্ব কৃষি বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষি উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে। প্রকারান্তে তা সরকার ঘোষিত ‘আমার বাড়ি আমার খামার ‘কার্যক্রম’
বাস্তবায়নে সহযোগী ভূমিকা রাখবে।
নগর কৃষি: নগর এলাকায় এমন একটি কৃষি ব্যবস্থা যেখানে পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের জনবল স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে বাড়ির আঙিনায়, ছাদে, বারান্দায় কৃষি কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং যা পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বাড়তি আয়ের উৎস হবে।
উল্লম্ব কৃষি: উল্লম্ব কৃষি একটি সৃজনশীল ব্যবহারিক কৃষি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে অতি অল্প স্থানে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা যায়। এ প্রযুক্তিকে অন্দরমহল কৃষি বলা হয়ে থাকে। কাঠের, ধাতব বা কংক্রিটের তাক উল্লম্বভাবে সাজিয়ে তা তৈরি করা যায়। বাস্তবিক অর্থে এটা একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কৃষিপ্রযুক্তি, যেখানে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, সার ব্যবস্থাপনা, বালাই ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিতভাবে করা হয়। যেমন করা হয় গ্রিনহাউজ পদ্ধতিতে। প্রাকৃতিক সূর্যালোকের পরিবর্তে কৃত্রিম এলইডি দ্বারা পরিচালিত করা যায়। এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক মুক্ত অর্গানিক খাদ্য উৎপাদন সম্ভব।