বিদেশ যাওয়ার আগ্রহ বাড়ছে ইংলিশদের!

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে বিবেচনা করা হয় ফুটবল মঞ্চের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আসর হিসেবে। যেখানে সবচেয়ে বেশি দল শিরোপার জন্য লড়াই করে থাকে। যে কারণে ইংলিশ ফুটবলাররা সাধারণত ইংল্যান্ডের বাইরে গিয়ে খেলেন না। বরং পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের তারকাদের ভিড়ে মুখরিত থাকে প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চ। এটা খুবই স্বাভাবিক যে একটি অঞ্চলের খেলোয়াড়রা নিজেদের মেলে ধরার জন্য স্বদেশী ক্লাবগুলোতেই খেলতে চাইবেন। বিশ্বব্যাপী সেটি খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপারও বটে। তবে এই ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি একটু বেশিই সত্য। খুব কম সময়েই ইংলিশ ফুটবলাররা তাদের নিজেদের দেশের বাইরে গিয়ে খেলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এসে সে চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। এখন ইংল্যান্ডের বাইরে ইংলিশ খেলোয়াড়দের সংখ্যাও আগের চেয়ে বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বড় ক্লাবগুলোয় ম্যাচ না পাওয়াটাই ক্লাব বদলের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে সামনে এসেছে।

বর্তমানে বেশ কয়েকজন ইংলিশ খেলোয়াড় ইংল্যান্ডের বাইরে খেলছেন। অবশ্য গোটা ব্রিটেনকে হিসাবে নিলে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ জনে। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, সামনে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। পাশাপাশি বাইরে খেলা দুজন ইংলিশম্যানের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় নতুনদের ইংল্যান্ডের বাইরে যেতে অনুপ্রাণিত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাদোন সানচো খেলতেন ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে। তাকে ভাবা হচ্ছে, ইংলিশ ফুটবলের ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে। গার্দিওলার অধীন সিটি যখন ফর্মের তুঙ্গে, তখনই ম্যানসিটি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন সানচো। কিন্তু একজন ইংলিশ ফুটবলারের জন্য ম্যানসিটির মতো বড় ক্লাবে খেলতে পারাটা স্বপ্নের মতো। তাও আবার গার্দিওলার মতো বিশ্বসেরা কোচের অধীনে। পাশাপাশি শিরোপাজয়ী হিসেবে তালিকায় নাম ওঠানোর ব্যাপার তো আছেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিসের আশায় সিটির মতো ক্লাব ছেড়ে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে গেলেন সানচো? জানা গেছে, ম্যানসিটিতে নিজের মনমতো ম্যাচ টাইম না পাওয়ায় ক্লাব ছেড়ে যান তিনি। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে গার্দিওলার অনুরোধও ফেরাতে পারেনি সানচোকে।

যে উদ্দেশ্যে সানচো সিটি ছেড়েছিলেন, সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরিভাবেই সফল হয়েছে। বরুশিয়া পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করল সানচোকে। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এ তারকাকে ৬৩ ম্যাচে খেলানো হয়েছে। যেখানে নিজেকে প্রমাণ দিয়ে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন এই তারকা ফুটবলার। যার ফলে এরই মধ্যে জাতীয় দলেও সুযোগ পেতে শুরু করেছেন তিনি। সিটিতে থেকে গেলে এ সুযোগ কবে পেতেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তার ওপর ম্যানসিটিতে এত এত তারকায় ঠাসা। তাদের সঙ্গে লড়াই করে জায়গা তৈরি করে নেয়াটা মোটেই সহজ বিষয় ছিল না। সানচোর এ দৃষ্টান্তই বলে দিচ্ছে ইংলিশ ফুটবলারদের মানসিকতা এখন বদলে যেতে শুরু করেছে।

সানচোর পর ইংল্যান্ড থেকে বিদেশ যাত্রা করা অন্য বড় তারকাটি হলেন কিয়েরন ট্রিপিয়ার। মাত্র গত মৌসুমেই টটেনহাম হটস্পার্স ছেড়ে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদে পাড়ি জমান ২৯ বছর ট্রিপিয়ার। টটেনহামে নিজেকে প্রমাণ করা ট্রিপিয়ারের অ্যাতলেটিকোই জায়গা তৈরি করে নেয়া মোটেই কঠিন কিছু ছিল না। ২০ মিলিয়ন পাউন্ডে অ্যাতলেটিকোয় গিয়ে এরই মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করেছেন এই ইংলিশ ডিফেন্ডার।

এদিকে ইংল্যান্ডের বাইরে খেলা এ দুই ইংলিশ তারকারা জাতীয় দলের হয়েও নিয়মিত মাঠে নামছেন। বিদেশী ক্লাবের হয়ে খেলার সময় মোট ২৬ জন ইংলিশ ফুটবলার ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যার ২৫তম জন হচ্ছেন সানচো ও ২৬তম হলেন ট্রিপিয়ার। তাদের আগে বিদেশী ক্লাবের হয়ে খেলার সময় একই সঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ খেলেছিলেন কিংবদন্তি ডেভিড বেকহাম।

পাশাপাশি কেউ কেউ এমনটাও মনে করেন যে, জাতীয় দলের কিছু খেলোয়াড় বাইরে খেললে তা দলের জন্য ইতিবাচক ফল নিয়ে আসতে পারে। যারা এমনটা মনে করেন তাদের উল্লেখযোগ্য জন হলেন স্পেনের বিশ্বকাপ ও ইউরো বিজয়ী কোচ ভিসেন্তে দেল ভস্ক। তিনি বলেছিলেন, ‘খেলোয়াড়দের বাইরে খেলাটা আমাদের জন্য ভালো। এটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ২০১০ সালে স্পেন বিশ্বকাপ জেতার সময় তিন খেলোয়াড় ছিলেন যারা ইপিএলে খেলতেন এবং ইউরো জেতার সময় তাদের মোট চারজন খেলোয়াড় ছিলেন যারা ইংল্যান্ডে খেলতেন। অবশ্য ইংল্যান্ডের জন্য বিষয়টি একই রকম নাও হতে পারে। তবে এটুকু অন্তত বলা যায়, সানচো ও ট্রিপিয়ারের অবস্থান উঠতি ইংলিশ ফুটবলারদেরও বাইরে যেতে উৎসাহী করে তুলতে পারে।

কেবল এই দুজনই নন, আরো বেশ কজন ইংলিশ খেলোয়াড় বর্তমানে খেলছেন ইংল্যান্ডের বাইরে। যেখানে সানচো ছাড়া আরো পাঁচজন খেলেন বুন্দেসলিগায়। এছাড়া ট্রিপিয়ারের পাশাপাশি স্পেনে খেলা অন্য খেলোয়াড়টি হলেন ওসাসুনার ফরোয়ার্ড ব্রেন্ডন থমাস। এছাড়া অন্যান্য ক্লাবে খেলে থাকেন আরো কজন ইংলিশ ফুটবলার। যাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন সাম্পাদোরিয়ার রোনালদো ভিয়েরা, শালকের জনজোয়ে কেনি, ফুরচনার লুইস বাকের ও দিজনের স্টেফি মাভিদিদি।

দ্য গার্ডিয়ান, প্ল্যানেট ফুটবল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন