ছয় জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের প্রাণহানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

চাঁদপুরে একই পরিবারের চার সদস্যসহ মাগুরা, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, বাগেরহাট ও মাদারীপুরে বজ্রপাতে মারা গেছেন ১০ জন। গতকাল এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

চাঁদপুর: জেলায় ঘুরতে এসে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের চার সদস্য। গতকাল চাঁদপুর বড়স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন কচুয়া উপজেলার আন্দিরপাড় গ্রামের দুবাই প্রবাসী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রেহানা বেগম (৩৫), ছেলে শিশু সাব্বির (১৪), মেয়ে সামিয়া (১০) ও রেহানার মা অহিদা বেগম (৬৫)। অহিদা বেগমের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কৈলাইন গ্রামে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে রেহানা বেগম ছেলেমেয়েকে নিয়ে চান্দিনার কৈইলান গ্রামে বাবার বাড়ি বেড়াতে যান। তার স্বামী সাইফুল ইসলাম গত শনিবার বিকালে স্ত্রী-সন্তানদের বাড়ি আনতে সেখানে যান। তবে রেহানা তার স্বামী সাইফুলকে একা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে মা, বোন ও দুই সন্তানসহ চাঁদপুর বড়স্টেশনে মেঘনার মোহনায় ঘুরতে আসেন। তারা সেখানে অবস্থানকালে দুপুরের দিকে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এর একপর্যায়ে বজ্রপাতে অহিদা বেগম, রেহানা বেগম, সাব্বির ও সামিয়া গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের দ্রুত উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সবাইকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। মানবিক কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

মাগুরা: জেলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার বাঁশতৈল গ্রামের মৃত তহমান মোল্যার ছেলে মোসলেম মোল্যা (৬২) ও মহম্মদপুর উপজেলার মণ্ডলগাতী গ্রামের মৃত খসরুজ্জামান বিশ্বাসের ছেলে বিপ্লব বিশ্বাস (৩৫)।

জানা গেছে, গতকাল বেলা ১১টার দিকে মাঠ থেকে ছাগল আনতে গিয়ে বজ্রাহত হয়ে মোসলেম মোল্যা মারা যান। এ সময় তার নাতি সামিউল আহত হন। অন্যদিকে বেলা ২টার দিকে বিপ্লব বিশ্বাস ও হুমায়ন নামে দুই নির্মাণ শ্রমিক মহম্মদপুর উপজেলার ঝামা বাজারে একটি ভবনের ছাদে কাজ করার সময় বজ্রাহত হন। অন্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিপ্লবকে মৃত ঘোষণা করেন। হুমায়ুনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

রাজবাড়ী: বালিয়াকান্দিতে বিলে মাছ শিকার করতে গিয়ে বজ্রপাতে মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস ওরফে আরজাদ নামে (৫৫) এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার বেরুলী বিলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আরজাদ উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বেরুলী গ্রামের মৃত আজাহার আলী বিশ্বাসের ছেলে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বজ্রপাতের খবর পেয়েই আমি সেখানে গেছি। নিহতের পরিবারের সদস্যদের একটি আবেদন করতে বলেছি। আবেদন পেলেই সহায়তা দেয়া হবে।

মেহেরপুর: গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের মাঠে মহিষ চরানোর সময় বজ্রপাতে নৈয়ব আলী (২৯) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে এ ঘটনা ঘটে। নৈয়ব আলী ধানখোলা গ্রামের হানিফ আলীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল নিজেদের দুটি মহিষ মাঠে চরাতে যায় নৈয়ব আলী। বিকালে বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে তিনি আহত হন। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বাগেরহাট: মোড়েলগঞ্জে বজ্রপাতে বিমল মিস্ত্রি (৫৫) নামের এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার হোগলাপাশা গ্রামে একটি বাড়িতে গাছ কাটার সময় বজ্রপাতে তিনি মারা যান। বিমল মিস্ত্রি হোগলাপাশা গ্রামের মহেন্দ্র মিস্ত্রির ছেলে।

হোগলাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল ইসলাম নান্না বলেন, বিমল মিস্ত্রি তার বাড়ি থেকে কিছু দূরে একটি গাছ কাটছিলেন। এ সময় বৃষ্টিপাত শুরু হলে বিমল বজ্রাহত হন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

মাদারীপুর: সদর উপজেলায় বিল্লাল মোল্লা (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মন্দী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মন্দী এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল গতকাল সকাল থেকে বাড়ির পাশে একটি ঘর নির্মাণের কাজ করছিলেন। দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুল ওহাব এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন