নওয়াখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়

বিলীনের ১১ বছরেও হয়নি ভবন, পাঠদান গাছতলায়

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নড়াইল

মধুমতী নদীর ভাঙনে ২০০৮ সালে বিলীন হয় নড়াইলের লোহাগড়ার শালনগর ইউনিয়নের নওয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। গত ১১ বছরে বিদ্যালয়টির জন্য নতুন করে আর স্থায়ী পাকা ভবন নির্মাণ হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয় কখনো ছাপড়া ঘরে, কখনো অন্যের বাড়িতে। আর তিন বছর ধরে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম চলছে ছোট একটি টিনের ঘর ও গাছতলায়। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নওয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭২ সালে। ২০০৮ সালে বিদ্যালয়টির ভবন মধুমতীগর্ভে বিলীনের সময় শিক্ষার্থী ছিল তিন শতাধিক। কিন্তু এরপর থেকেই ধীরে ধীরে কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এর মূল কারণ ভবনের অভাব। ভাঙনের পর পরই নদীর পাড়ে যে ছাপড়া ঘরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলত, সেটিও ২০১৩ সালে বিলীন হয়ে যায়। এরপর বিদ্যালয়ের সভাপতির বাড়ির একটি ঘরে ও উঠানে পাঠদান চলে বেশ কয়েক বছর। পরে ২০১৬ সালে গ্রামের রাস্তার পাশে তোলা হয় ছোট একটি টিনের ঘর। ওই ঘরেই বর্তমান দুটি শ্রেণীর ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বাকি দুটি শ্রেণীর পাঠদান চলছে গাছতলায়। বিদ্যালয়টির এ দুরবস্থার কারণে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০০ থেকে কমে মাত্র ৫০ জনে এসে ঠেকেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ছোট টিনের ঘরের তিনটি কক্ষের একটি অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্য দুটি ব্যবহার করা হচ্ছে শ্রেণীকক্ষ হিসেবে। ছোট কক্ষগুলোয় জানালা রয়েছে একটি করে। ফলে সবসময়ই সেখানে আলোর স্বল্পতা থাকে। সিলিং ছাড়া নিচু ঘরের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই পাঠ নেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এ ঘরের বারান্দায় ও গাছতলায় ক্লাস হয় আরো দুটি শ্রেণীর।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিলকিস আক্তার, সাজেদা খানম ও খন্দকার মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রথম শিফটে ১২টা পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক (শিশু), প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস হয়। আর দ্বিতীয় শিফটে ক্লাস হয় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর। সমাপনী পরীক্ষার জন্য পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস দুই শিফটে নেয়া হয়। গাছতলায় বা বারান্দায় ক্লাস নিতে গিয়ে সৃষ্টি হয় বিড়ম্বনা। বৃষ্টি হলে গাছতলায় আর ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে আসে না। খোলা স্থানে শিক্ষা উপকরণও ব্যবহার করা যায় না। পরীক্ষার সময় হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি হলে পরীক্ষা নিতেও সমস্যা হয়। খোলা পরিবেশে পাঠদানে ও পরীক্ষায় মনোযোগ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক সৈয়দ জিল্লুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে বার্ষিক সরকারি বরাদ্দের টাকায় ৬ শতাংশ জমি কিনে ছোট ঘরটি তুলেছি। ভবন না হলে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরে আসছে না। এতে এ এলাকার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, ভবন না থাকায় ওই বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। ভবনের জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই বিদ্যালয়টির জন্য ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন