সেপ্টেম্বরে স্থিতিশীল ছিল বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দামে স্থিতিশীলতা বজায় ছিল। চিনির দাম কমে গেলেও এ সময় ভোজ্যতেল এবং মাংসের দাম বৃদ্ধি অন্যান্য পণ্যের দামে ভারসাম্য আনতে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ে প্রতি মাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এফএও। সেপ্টেম্বরের বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে চলতি মাসের ৩ তারিখে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। ১৭০ পয়েন্টের ওপর ভিত্তি করে এবার খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক তৈরি করা হয়েছে। এফএও ফুড প্রাইস ইনডেক্স (এফএফপিআই) শিরোনামের এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম আগস্টের মতোই অপরিবর্তিত ছিল। যেখানে গত বছরের একই সময়ে দামের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

এফএফপিআইর তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে খাদ্যশসের দাম স্থিতিশীল ছিল। এ সময় গমের দাম বাড়লেও কমতির দিকে ছিল ভুট্টার। অন্যদিকে এ সময়ে বৈশ্বিক বাজারে চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমতির দিকে ছিল। চাহিদা কম থাকায় এবং বিশেষ করে ফিলিপাইন ও নাইজেরিয়া সরকারের নেয়া পলিসিকে কেন্দ্র করে অনিশ্চয়তার জেরে এ সময় খাদ্যপণ্যটির দাম কমতির দিকে ছিল বলে মনে করছে এফএও।

তবে এ সময়ে ভোজ্যতেলের বাজারে ছিল চাঙ্গা ভাব। পণ্যটির দাম এ সময়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভোজ্যতেল ব্যবহারে শীর্ষ তালিকায় থাকা ভারত ও চীনে পাম অয়েলের চাহিদা কমে গেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বায়োডিজেল খাতে পণ্যটির ব্যবহার বেড়েছে। অন্যদিকে ভোজ্যতেল হিসেবে পাম অয়েল ব্যবহার কমে আসার ফলে সরিষা তেলের দাম বৃদ্ধি পায়। তবে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের দাম কমতির দিকে ছিল।

এফএও সুগার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে চিনির দাম ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কম ছিল। বিশ্বব্যাপী পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ থাকায় এ সময় চিনির দাম কমতির দিকে ছিল। এছাড়া ব্রাজিলে ইথানল উৎপাদনে আখ ব্যবহার করায় চিনির চাহিদাও কম ছিল। আর গত মাসে দুগ্ধপণ্যের দাম দশমিক ৬ শতাংশ কম ছিল। এ সময় গুঁড়ো দুধের দাম বাড়লেও পনির ও মাখনের দাম কমতির দিকে ছিল।

অন্যদিকে এফএও তাদের বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও চাহিদার নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। যেখানে চলতি বছর শেষে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রাক্কলনের তুলনায় কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে গত বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এ সময় উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ২৭০ কোটি ৬০ লাখ টনে।

প্রাক্কলন কমানোর কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করায় এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় গমের উৎপাদন কমে যেতে পারে। এছাড়া চীন, ভারত, ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রে কমতে পারে চালের উৎপাদন। যার ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রাক্কলন কমিয়ে আনতে হয়েছে সংস্থাটির।

তবে চাল ও গম ছাড়া অন্যান্য দানাদার শস্য উৎপাদন বাড়বে বলে মনে করছে এফএও। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এবার যব উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে ভুট্টার বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। যার ফলে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন এবার প্রাক্কলনের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে।

উৎপাদনের বিপরীতে চলতি বছর খাদ্যশস্যের ব্যবহার কিছুটা কমে যেতে পারে বলে মনে করছে এফএও। এ সময় বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ২৭১ কোটি ৪০ লাখ টনে। গত মাসের প্রাক্কলনের তুলনায় এটি কম হলেও এ সময় রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য ব্যবহার হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

অন্যদিকে ২০২০ মৌসুম শেষে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের মজুদ দাঁড়াতে পারে ৮৫ কোটি টনে, যা মৌসুম শুরুর তুলনায় ২ শতাংশ কম। এ সময় গমের মজুদ ১ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও কমতে পারে ভুট্টার। চীনে মজুদ কমে যাওয়ার আশঙ্কা ভুট্টার মজুদ কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

এফএওএর প্রাক্কলন তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য অপরিবর্তিত থাকবে। এ সময় বিশ্বব্যাপী ৪১ কোটি ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্যের বাণিজ্য হতে পারে। গম ও চাল রফতানি বৃদ্ধি পেলেও দানাদার শস্য রফতানি প্রত্যাশার তুলনায় কমে যেতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন