জিএম শ্রমিকদের ধর্মঘটে নতুন মন্দার শঙ্কায় মার্কিন অর্থনীতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ব্যাপক সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্প ও গাড়ির যন্ত্রাংশ শিল্প, যাদের ভবিষ্যৎ বেশ ঘোলাটে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। জেনারেল মোটরসের (জিএম) শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে উত্তর আমেরিকার বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে পড়েছে এবং ৪৬ হাজার শ্রমিক বেকার দিন গোজরান করছে। চতুর্থ সপ্তাহে গড়ানো ধর্মঘটটির প্রভাব পড়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে। খবর ব্লুমবার্গ।

মিশিগান ও কানাডার যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী থেকে শুরু করে বার, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা নগদ অর্থ সংকটে চাপের মুখে রয়েছে। কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা ভীতি ছড়িয়েছে, দুর্বল ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জেরে অর্থনীতি ফের মন্দায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী বছরের নির্বাচনে মিশিগানের মতো ঝুলন্ত রাজ্যে (সুইং স্টেট) ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।

ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স লোকাল ৬৫২-এর চেয়ারম্যান ও ওয়্যারহাউজ শ্রমিক মাইক লুনা বলেন, এটি একটি প্রয়োজনীয় ধর্মঘট; কিন্তু প্রত্যেকেই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধর্মঘটরত এবং ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের নিয়ে এ শ্রমিক ইউনিয়নটি প্রতিষ্ঠিত।

লুনা রাইডার ইন্টিগ্রেটেড লজিস্টিকস ওয়্যারহাউজে কাজ করছেন, যেখানে সম্প্রতি ৫০০ কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। এদিকে পার্কিং লটে পড়ে রয়েছে সেমি-ট্রেইলারগুলো। এগুলো নিকটস্থ দুটি জিএম কারখানায় নেয়ার জন্য ভরে রাখা হয়েছিল।

গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটি এরই মধ্যে সুদ ও কর-পূর্ব ১০০ কোটি ডলার আয় হারিয়েছে। জিএমের সবচেয়ে বড় যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীর লোকসান হয়েছে ২০ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ নির্মাতারা তাদের কর্মীদের ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে।

মিশিগানে ধর্মঘটে ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রাংশ শ্রমিকরা স্ট্রাইক পে পাচ্ছে না। চলতি সপ্তাহে রাজ্য থেকে সর্বোচ্চ ৩৪২ ডলার বেকার ভাতা পাচ্ছে, যা তার সহকর্মীদের জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানান শ্রমিক ইউনিয়ন নেত্রী লুনা। ধর্মঘটে নামা শ্রমিকরা জিএমের দুর্যোগ তহবিল থেকে তার চেয়েও আরো কম ভাতা পায়, সপ্তাহে যার পরিমাণ ২৫০ ডলার।

শুক্রবার আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে শ্রমিক ইউনিয়নটির ভাইস প্রেসিডেন্ট টেরি ডাইটস জানান, জিএমের সঙ্গে আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা এবং অস্থায়ী কর্মীদের চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে আলোচনা চলছে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কয়েকটি সূত্র শনিবার জানায়, উভয়পক্ষ চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছলেও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া বাকি রয়েছে। একটি হচ্ছে কর্মীদের পেনশন পরিকল্পনা নিশ্চিত করা এবং এন্ট্রি লেবেলের কর্মীদের স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ২৮ ডলার কার্যকর করা।

জিএমের শ্রমিকদের এ ধর্মঘট আমেরিকার অর্থনীতিতে জটিল পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বড় পতন দেখা গেছে। জিএমের ধর্মঘটে আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এটি মার্কিন অর্থনীতি থেকে ৪০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ মজুরি কেটে নিচ্ছে।

কারখানাবহুল দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে অর্জিত আয়ের ১ দশমিক ৮০ শতাংশ কেটে নিচ্ছে বলে জানান অ্যান্ডারসন ইকোনমিক গ্রুপ ইন ল্যান্সিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্যাট্রিক অ্যান্ডারসন। এক সাক্ষাত্কারে তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগান যে শিগগিরই মন্দায় পড়ছে তার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

ধর্মঘটের ফলে অ্যাক্সল ও লিয়ার করপোরেশনের মতো বৃহৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন লোকসান গুনছে ২০ লাখ ডলার। যন্ত্রাংশ নির্মাতা টেনেকো সেখানে প্রতিদিন ১০ লাখ ডলার খোয়াচ্ছে বলে জানান আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটসের বিশ্লেষক জোসেফ স্পেক।

ধর্মঘট শেষ হলে জিএম ও তার সরবরাহকারীরা উৎপাদন পুষিয়ে নেবে, কিন্তু পুরোটা পারবে না। এতে কিছু মুনাফা হারিয়ে যাবে বা পরবর্তী বছরে গিয়ে ঠেকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন