প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এক বিরল পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক। গত বৃহস্পতিবার কর্মীদের প্রশ্নোত্তর নিয়ে একটি লাইভ অনুষ্ঠান করেন ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। সেখানে এক কর্মীর প্রশ্নে বিলিয়নেয়ারদের বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়ার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নটি করেন ফেসবুকের ওই কর্মী। খবর বিজনেস ইনসাইডার।
ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক
জাকারবার্গ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক হওয়ার খবর বেশ পুরনো। চলতি বছর ফোর্বস
ম্যাগাজিনে বলা হয়, তার বর্তমান সম্পদমূল্য ৭০ বিলিয়ন ডলার।
গত সেপ্টেম্বর বার্নি স্যান্ডার্স
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাত্কারে বলেন,
আমি মনে করি না, কোনো বিলিয়নেয়ার থাকা উচিত। এর
ব্যাখ্যায় তিনি সম্পদের ওপর কর এবং জাতীয় সম্পদ নিবন্ধনের ব্যবস্থার কথা জানান।
তিনি বলেন, এ প্রস্তাবের অর্থ এ নয় যে,
বিলিয়নেয়ারের কোনো অস্তিত্ব রাখা হবে না। বরং
বিলিয়নেয়াররা যেভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে রয়েছেন সেটি হতে না দেয়াই এর
উদ্দেশ্য।
গত বৃহস্পতিবার কর্মীদের প্রশ্নোত্তর
অনুষ্ঠানে এক কর্মী জাকারবার্গকে প্রশ্ন করেন, একমাত্র বিলিয়নেয়ারের সঙ্গে বিষয়টি
নিয়ে আমি আলোচনা করার সুযোগ যখন পেয়েছি,
মার্ক,
সিনেটর স্যান্ডার্সের বিবৃতির বিষয়ে আপনার কী মত?
জবাবে জাকারবার্গ বলেন, আমি
বুঝতে পারছি আসলে তিনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন। আমি জানি না, একজন
ব্যক্তি হিসেবে আমার সর্বোচ্চ এ পরিমাণ সম্পদ অর্জন করা উচিত, এমন
কোনো সর্বোচ্চ সীমা আছে কিনা। তবে একটা পর্যায়ে গিয়ে সেই পরিমাণ সম্পদ নিজের
কব্জায় রাখার যোগ্যতা ব্যক্তি হারিয়ে ফেলেন। আমি মনে করি, আপনি
যদি ভালো কিছু করেন, তাহলে আপনি পুরস্কৃত হবেন। তবে আমি বিশ্বাস করি, একটা
সীমার পর অর্জনের যোগ্যতা বা সক্ষমতা থাকলেও ওই সম্পদ আহরণ করা অযৌক্তিক।
জাকারবার্গ ও তার স্ত্রী প্রিসিলা
চ্যান এরই মধ্যে তাদের বিপুল সম্পদের বেশির ভাগই দাতব্য সংস্থায় দান করে দেয়ার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ দম্পতির পরিচালিত দাতব্য সংস্থা চ্যান-জাকারবার্গ
ফাউন্ডেশন স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর অনুদান দিচ্ছে। জাকারবার্গ এ বিষয়টির প্রতি
ইঙ্গিত করে বলেন, অনেকে এ বলে সমালোচনা করেন যে,
অতিধনী লোকেরাই ঠিক করে দেন কোন খাতে অনুদান
দেয়া হবে আর কোথায় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, উদাহরণস্বরূপ, আমরা
বিজ্ঞানে অনুদান দিই। কিছু লোক এখন বলতে পারেন, কিছু ধনী লোকেই শুধু নির্ধারণ করবেন
বিজ্ঞানের কোন প্রকল্পে কী পরিমাণ বিনিয়োগ হবে—এটা কতটা ন্যায্য। আমি জানি না, এটার
জবাব ঠিক কীভাবে দেব!
এক্ষেত্রে দাতব্য বা মানবহিতৈষণামূলক
কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নিজস্ব যুক্তি তুলে ধরেন জাকারবার্গ। তিনি বলেন, এসব
ব্যাপারে বিনিয়োগের সবটাই নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার—এটা একটা বিকল্প হতে পারে। এক্ষেত্রে
আমার একটা আশঙ্কা হলো, যখন আমি এ ধরনের মনোভাবের কথা শুনি যেমনটি সিনেটর বলেছেন, সবকিছুই
সরকারিভাবে করা উচিত, আমি মনে করি, এটা বাজার এবং মানুষের বিভিন্ন প্রচেষ্টার বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্বকে
বঞ্চিত করবে।
মুক্তবাজার নিয়ে জাকারবার্গের এ
যুক্তি মূলত আধুনিক উদারনীতিবাদীদের মৌলিক বিশ্বাস। এ মতবাদ অনুযায়ী, সরকারি
নীতির চেয়ে বাজার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বার্নি স্যান্ডার্স এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান
করে বিত্তবান আমেরিকানদের প্রতি কঠোর আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করতে চান।
তবে জাকারবার্গ বিশ্বাস করেন দুটি কাজ
একসঙ্গেই করা সম্ভব।