আরবিআইয়ের জরিপ

২০০৮ সালের পর সবচেয়ে নাজুক ব্যবসায় পরিবেশ

বণিক বার্তা ডেস্ক

সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে ভারতের ব্যবসায় পরিবেশ ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সবচেয়ে বাজে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিপে বর্তমান শ্লথগতির মারাত্মক অবস্থা উঠে এসেছে। এ কারণে গত মাসে করপোরেট কর হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল আরবিআই।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের পর এবং ২০০৮-এর বৈশ্বিক মন্দার পর দ্বিতীয়বারের মতো ২০১৯-২০ অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের কোম্পানিগুলোর ক্রয়াদেশ চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) ২৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সবচেয়ে বড় পতন।

আরবিআইয়ের ত্রৈমাসিক জরিপে আরো বলা হয়, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ছয় বছরের সর্বনিম্ন। অনিষ্পন্ন ক্রয়াদেশের পরিমাণও কমেছে, যার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট, আগের প্রান্তিকগুলোর নেতিবাচক প্রভাব এখনো বহাল রয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতের সক্ষমতা ব্যবহার ৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের ত্রৈমাসিকে এ হার ছিল ৭৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় পরিবেশ মূল্যায়নকারী দ্য বিজনেস অ্যাসেসমেন্ট সূচক ২০০৮ আর্থিক সংকট পরবর্তী সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় নেমে এসেছে। ব্যবসায় আশাবাদও সংকুচিত হয়েছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটলুক জরিপে আরো বলা হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের ক্রয়াদেশ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান পরিবেশে অবনতি হয়েছে। সুদ ও মজুরি হারে চাপ কমলেও মুনাফা এখনো দুর্বলই রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রবণতা বেশ অদ্ভুত ও উদ্বেগজনক।

অর্থনীতিবিদ ও ভারতের সাবেক মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন বলেন, ক্যাপেক্স সাইকেল চাঙ্গা করতে ৭৬ শতাংশ সক্ষমতা ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। তবে এ শ্লথগতিতে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে শিগগিরই চাঙ্গা ভাব আসছে না। নতুন ক্রয়াদেশে মারাত্মক সংকোচন অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ভোক্তা আস্থা সূচকেও একই ধরনের উদ্বেগজনক পরিবেশ দেখা যাচ্ছে।

আরবিআই জরিপে বলা হয়, সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ভোক্তা আস্থা দুর্বল হয়েছে এবং আগামী বছরে খানাগুলো তাদের আয় নিয়ে কম আশাবাদ প্রকাশ করেছে।

তবে সার্বিক ব্যয় ও অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের পেছনে ব্যয় শক্তিশালী থাকলেও অবকাশ ও বিলাসবহুল পণ্যে ব্যয় কমেছে। এতে চাহিদায় শ্লথগতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

বেশির ভাগ খানাই মনে করছে, আগামী ত্রৈমাসিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে। এতে আগামী মাসগুলোয় মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে পেশাদার পূর্বাভাসকারীদের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রকৃত জিডিপি হতে পারে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে কম।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। গত আগস্টের পলিসি মিটিংয়ে যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, তার থেকে তা ৮০ বেসিস পয়েন্ট কম। যদি পূর্বাভাস বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর সর্বনিম্নে দাঁড়াবে। অবশ্য আরবিআইয়ের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে গেলেও চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন