সুরাইয়া-সুমাইয়ার দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বাগেরহাট

বাগেরহাট সদর উপজেলার হরিণখানা এলাকার রাজমিস্ত্রি দিনমজুর বাবা মহিদুল হাওলাদারের দুই জমজ মেয়ে সাদিয়া আক্তার সুরাইয়া ও নাদিরা ফারজানা সুমাইয়া। অর্থাভাবে টিউশনি করিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এবছর এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগও পেয়েছেন তারা। তবে আর্থিক অভাবে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলেন তারা। জমজ এই দুবোনের উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসন। তাদের পড়াশোনার সবরকমের দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।

শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সার্কিটে হাউসে মেধাবী ওই দুই শিক্ষার্থী ও তার মায়ের সাথে কথা বলে তাদের এই আশ্বাস দেন। এসময় বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান, মোহাম্মাদ শাহজাহান, মো. রাহাত উজ্জামান, শিক্ষার্থীদের মা শাহিদা বেগম, কাউন্সিলর মোল্লা নাসির উদ্দিনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

মাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগে সুরাইয়া ৪ দশমিক ৮৬, সুমাইয়া ৪ দশমিক ৯১ পেয়ে পাস করলেও উচ্চ মাধ্যমিকে দুই বোনই জিপিএ ৫ (গোল্ডেন এ প্লাস) পায়। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় গ-ইউনিটে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (গ ইউনিট) বাণিজ্য অনুদেষ সুমাইয়ার মেধাক্রম ৮৪৬ এবং সুরাইয়ার মেধাক্রম ১১৬৩। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভর্তির শেষ দিন ৩১ অক্টোবর।

খবর পেয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন ওই দুই শিক্ষার্থীকে দুটি মুঠোফোন প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘বাগেরহাটে এরকম দুইজন মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে বিষয়টি জানতে পেরে সকালেই তাদের বাড়িতে যাই। স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় মহাদ্বয়কে বিষয়টি অবহিত করি। মেধাবী ওই মেয়েরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে বলেছেন। আমরা সব সময় মেধাবীদের পাশে থাকবো।’

এছাড়া বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমানও এই মেধাবী দুই শিক্ষার্থীকে পড়াশুনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। 

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বর্তমান সমাজে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষও সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। তাই তোমাদের লেখা পড়ার জন্য আমরা জেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করব। পড়াশুনা করে, তারা ভাল মানুষ হবে এই প্রত্যাশা করি।

মা শাহিদা বেগম বলেন, অনেক অর্থ কষ্টে থাকার পরও মেয়েদের পড়াশুনা করিয়েছি। মেয়রা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ছিলাম। সবাই যখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। তাই এখন একটু ভারমুক্ত হয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। আমি আমার সন্তানদের উন্নতি কামনা করি।

সাদিয়া আক্তার সুরাইয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরে এক ধরনের অনশ্চিয়তা কাজ করছিল মনের মধ্যে। জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র মহোদয়সহ অনেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন; সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। সকলের কাছে দোয়া চাই। যাতে ভালোভাবে লেখাপড়া করে দেশের সেবা করতে পারি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন