সংরক্ষিত বনাঞ্চল বন্ধক রেখে ঋণ

জুতা ব্যবসায়ীকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে বিপাকে ৪ ব্যাংক

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজারে জুতার ব্যবসা করতেন নাজিম উদ্দিন। বড় ধরনের ব্যবসার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও অনেকটা হঠাৎ করেই জাহাজভাঙা খাতের ব্যবসায় নামেন তিনি। পূর্বাপর বিবেচনা না করে ব্যাংকগুলোও উদারভাবে ঋণ জোগায় তাকে। কিন্তু ব্যবসার শুরুতেই লোকসানে পড়েন ব্যবসায়ী। ফলে তার কাছে থাকা ঋণের টাকা আদায় করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে চার ব্যাংক।

জানা গেছে, ঋণের জন্য ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ব্যাংকে শিপইয়ার্ডের যে জমি বন্ধক রেখেছিলেন, তা ছিল মূলত সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এরই মধ্যে বন বিভাগ ওই জমি দখলে নিয়েছে। ফলে বন্ধকি জমি বিক্রি করে ঋণ আদায়ের উপায়ও নেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের।

গত জুলাইয়ে জাতীয় সংসদে প্রকাশ করা শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় ৪৩ নম্বরে রয়েছে নাজিম উদ্দিনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসকে স্টিলের নাম। ওই তালিকা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের ২৭১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আটকে আছে। যদিও পাওনাদার ব্যাংকগুলোর হিসাবমতে, এসকে স্টিলের কাছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ১৩৭ কোটি টাকা, এবি ব্যাংকের ৮৪ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬৫ কোটি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ২৮ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বর্তমানে চার ব্যাংকের পাওনা ৩১৪ কোটি টাকা, যা খেলাপির খাতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বেশ আগেই।

সাধারণত ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলে গ্রাহকের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। তবে নাজিম উদ্দিনের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটেছে। ঋণ আদায়ে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তিনটি ব্যাংক মামলা করলে ঋণের টাকা শোধ না করে উল্টো পাওনাদার তিন ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নাজিম উদ্দিন।

বণিক বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাজিম উদ্দিন এবি ব্যাংক ইপিজেড শাখায় চলতি হিসাব খোলেন ২০১২ সালে। পরের বছরই (২০১৩ সাল) ব্যাংকটি থেকে এসকে স্টিলের নামে ঋণ সুবিধা নেন তিনি। জাহাজভাঙার ব্যবসার জন্য দেয়া ঋণের শর্ত ছিল, পুরনো জাহাজ আমদানি করে তা কেটে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির পর ব্যাংকের টাকা শোধ করবেন। কিন্তু আমদানি করা জাহাজ কেটে স্ক্র্যাপ বিক্রি করে দিলেও শর্ত অনুযায়ী ব্যাংকের ঋণ শোধ করেননি তিনি।

এরপর আরো দুই বছর পার হলেও ব্যাংকের টাকা পরিশোধের প্রয়োজনই মনে করেননি ব্যবসায়ী। ফলে বিভিন্ন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ঋণের টাকা উদ্ধারে তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা মামলা করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। কিন্তু ঋণগ্রহীতা এতেও ব্যাংকের টাকা শোধ না করে বরং উল্টো ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এবি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের টাকায় ব্যবসা করে সেই ঋণ ফেরত দেননি এসকে স্টিলের স্বত্বাধিকারী নাজিম উদ্দিন। ফলে ঋণের টাকা ফেরত পেতে তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মহিউল আলী আজমিকে বিবাদী করে ব্যাংকের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেন তিনি। এরপর পাওনা আদায়ে নাজিমের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক। ওই মামলায় ব্যাংকটির পাওনা উল্লেখ রয়েছে ৮৪ কোটি ৩৩ লাখ ২২ হাজার ২৭৯ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এসকে স্টিল নিয়ে বিপাকে রয়েছে এবি ব্যাংকের ইপিজেড শাখা। কারণ ঋণগ্রহীতা ধূর্ত প্রতারক। ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাছাড়া এই ব্যবসায়ী ঋণের বিপরীতে ব্যাংকে যে সম্পত্তি বন্ধক রাখেন, তাও এরই মধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। কারণ বন্ধক রাখা শিপইয়ার্ডের জমি (২৯৫ দশমিক ৭৬ শতক) ছিল সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ?

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন