টিলা কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ

খাদ্য ও আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে পাঁচ শতাধিক বানর

দেবাশীষ দেবু সিলেট

সিলেট নগরীর গোয়াইটুলা এলাকার একটি টিলা। টিলার ওপর হজরত চাষনী পীর (রহ.) নামে এক পীরের মাজার। স্থানীয়দের কাছে এটি বানরের টিলা নামে পরিচিত। টিলার গাছগাছালিতে দীর্ঘদিন ধরেই বাস করে আসছিল পাঁচ শতাধিক বানর। সম্প্রতি টিলা গাছপালা কেটে নির্মাণ করা হয় ঘরবাড়ি। ফলে খাদ্য আবাসস্থল হারায় বানরগুলো। বর্তমানে এসব বানর টিলা ছেড়ে চলে আসছে লোকালয়ে। নানা ধরনের উপদ্রবের পাশাপাশি হিংস্র আচরণ দেখা যাচ্ছে শান্ত প্রকৃতির প্রাণীটির মধ্যে। স্থানীয়দের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় বানর হত্যার অভিযোগ উঠছে।

সিলেট নগরীর গোয়াইটুলা এলাকার আব্দুল আলিমের নার্সারি পড়ুয়া ছেলে সাব্বির আহমদ গত সপ্তাহে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার পর দলবদ্ধ হয়ে চার-পাঁচটি বানর ঘিরে ধরে তাকে। স্কুল ব্যাগ কেড়ে নিতে চায়। ব্যাগ না দেয়ায় সাব্বিরকে কামড়ে দেয় দুটি বানর। এর পর তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়।

সোমবার একই এলাকার সুয়েব আহমদের বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র তছনছ করে ঘরের ফলমূল কাপড় নিয়ে পালিয়ে আসে একদল বানর।

চাষনী টিলার পাশেই রয়েছে দলদলি চা বাগান। একসময় বাগানেই ছিল বানরগুলোর আদি নিবাস। আশির দশকে চা বাগানের একাংশের বন কেটে গড়ে ওঠে আবাসন। ১৯৮৪ সালের শুরুর দিকে সেখানকার বানরগুলো মাজার এলাকায় বসত গড়ে। তখন থেকে এখানেই বসবাস করে আসছিল বানরগুলো। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে আবাসস্থলটুকুও কেড়ে নেয়া হয়। গত কয়েক বছরে টিলার আশপাশের বন টিলা ধ্বংস করে আবাসন গড়েছে মানুষ। ফলে আবারো খাদ্য আবাস সংকটে পড়ে গেছে বানরগুলো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম বলেন, টিলা তো বানরেরই আবাসস্থল ছিল। মানুষজন ওদিকে গিয়ে বানরের আবাস ধ্বংস করেছে। ফলে খাবার আবাস সংকটে লোকালয়ে এসে হিংস্র আচরণ করছে বানর। দলদলি চা বাগানের বন কেটে ফেলায় বানরগুলোর পূর্বসূরিরা নিরাশ্রয়ী হয়ে পড়েছিল। এদের আশ্রয় এখন মাজারের টিলায়। খাদ্য সংকটে এদের যাতে আবারো আশ্রয়হারা হতে না হয়, সেজন্য বন বিভাগের উদ্যোগ নেয়া উচিত।

বুধবার চাষনী পীরের মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিলার পাদদেশেই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বাসা। এসব বাসার ছাদ, কার্নিশ আর দেয়ালে ঝুলছে বানর। এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে লাফালাফি করছিল কয়েকটি বানর। মাজারে ঘুরতে আসা অনেকেই বানরের জন্য নিয়ে এসেছেন শুকনো খাবার। সেসব খাবার ছুড়ে দিচ্ছিলেন বানরকে।

স্থানীয়রা জানান, আগে বানরগুলো সাধারণত মাজারের দেয়াল টিলার চূড়ার উঁচু গাছগুলোয় অবস্থান করত। মাজারভক্ত কেউ খাবার দিতে এলে কেবল সেগুলো নিতেই লোকালয়ে আসত।

মাজারের প্রধান ফটকের সামনে মিম স্টোর নামে একটি খাদ্যসামগ্রীর দোকান। মিম স্টোরের স্বত্বাধিকারী সেলিম আহমদ বলেন, টিলায় আগে অনেক কাঠবাদামের গাছ ছিল। সেগুলো এখন আর নেই। গাছগাছালিও কমে গেছে। ফলে বানরের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বানরগুলো মানুষের বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে।

মাজারের অন্যতম খাদেম মোহাম্মদ মুহিত হাসান জানান, টিলায় বানর রয়েছে পাঁচ শতাধিক। এছাড়া বছর নতুন বাচ্চা জন্ম নিয়েছে ২৫-৩০টির মতো। খাদ্য সংকটে বানরগুলো বাসায় ঢুকে খাবার চুরির চেষ্টা করে। অভুক্ত বানরগুলো অনেক সময় লোকজনকে কামড় দেয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে বানর আর লোকালয়ে যাবে না।

এখানকার বানরগুলো রেসাস ম্যাকাকিউ বা লালমুখো প্রজাতির বলে জানান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতান আহমেদ টিপু। বানরগুলোর উপদ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন