ডব্লিউআরআইয়ের প্রতিবেদন

টেকসই অর্থায়নে পিছিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংকগুলো

বণিক বার্তা ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় টেকসই অর্থায়নে বা টেকসই আর্থিক খাতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পূরণে পিছিয়ে রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি ব্যাংক। টেকসই আর্থিক খাতে বিনিয়োগের পরিবর্তে ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে বলে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট (ডব্লিউআরআই) অথচ টেকসই আর্থিক খাতে বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ আন্দোলন কর্মী, বিনিয়োগকারী সরকারগুলোর দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ রয়েছে বলে একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ডব্লিউআরআই সম্প্রতি নিজেদের নতুন গ্রিন টার্গেট টুল প্রকাশ করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু ইস্যুতে জনগণের কাছে বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকগুলোর যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা পূরণে সেগুলো কতটা সফল বা ব্যর্থ, তার একটা খতিয়ান উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ তুলনা করে সংস্থাটি জলবায়ু ইস্যুতে ব্যাংকগুলো টেকসই অর্থায়নে কতটা ভূমিকা রেখেছে তা খতিয়ে দেখেছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত শীর্ষ ৫০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ২৩টি ব্যাংক টেকসই আর্থিক খাতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার উদ্যোগ হিসেবে ২৩টি ব্যাংক টেকসই বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে।

যে ২৩টি ব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সফল হয়েছে, সেগুলোর ২০১৬ ২০১৮ সালের মধ্যে গড় বার্ষিক জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ, বার্ষিক টেকসই আর্থিক খাতে বিনিয়োগের প্রায় দ্বিগুণ। শুধু সাতটি ব্যাংকের বার্ষিক টেকসই আর্থিক খাতের বিনিয়োগ জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় শীর্ষ ব্যাংকগুলোর ভূমিকা প্রসঙ্গে ডব্লিউআরআইয়ের টেকসই বিনিয়োগ বিভাগের প্রধান গিউলিয়া ক্রিস্টিয়ানসন বলেন, বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকগুলো যদি টেকসই অর্থায়নে আন্তরিক হয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগেই তা ফুটে উঠবে। ব্যাংকগুলোর টেকসই আর্থিক খাত জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের তুলনামূলক হিসাব থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ব্যাংকের টেকসই আর্থিক খাতের বার্ষিক বিনিয়োগ জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের বার্ষিক বিনিয়োগের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে কম।

প্রসঙ্গত, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকগুলো টেকসই অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। ২০১৫ সালে প্যারিসের জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক সম্মেলনে বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণকারী ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে বিনিয়োগকারী, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা পরিবেশ কর্মীদের চাপের মুখে প্রথম সারির কিছু ব্যাংক জলবায়ু ইস্যুতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নতুন করে নির্ধারণের গুরুত্ব স্বীকার করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো স্বল্প-কার্বন অর্থনীতিতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ দ্রুতগতিতে বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও স্বীকার করেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে ডাচ ব্যাংক এবিএন অ্যামরো যুক্তরাষ্ট্রের অম্যালগাম্যাটেড ব্যাংক জলবায়ু ইস্যুতে দায়বদ্ধ থাকার অংশ হিসেবে নিজেদের বিনিয়োগের হিসাব পদ্ধতি অধিকতর স্বচ্ছ করার কথা ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া ডয়েচে ব্যাংক, সিটিগ্রুপ বার্কলেসও জলবায়ু ইস্যুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নীতিমালা মেলে চলার কথা ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাংকগুলো দায়িত্বশীল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সরকারকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সর্বনাশা প্রভাব কমাতে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে বলে জানিয়েছে ডব্লিউআরআইয়ের প্রতিবেদন। সূত্র: রয়টার্স।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন