প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাঁচগাঁওয়ে। দুর্গার রঙ লাল হওয়ায় দেবী দর্শনের জন্য দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও অনেক পুণ্যার্থী ছুটে আসেন এখানে। দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা
সবার কাছে পূজা মানেই নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ। আমার কাছেও ছোটবেলায় ছিল ঠিক তাই। কিন্তু এখন পূজায় ছুটি পেলেই বেরিয়ে পড়তে মন চায় নতুন কোনো গন্তব্যে। পূজায় দশমীতে বন্ধ থাকে আমার অফিস। মূলত দশমীতে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতাই নেই, দেবী বিসর্জন ছাড়া। তাই আগের চারদিন অনেক কষ্ট করে ছুটি নিতে হয়। এবার তার ব্যত্যয় হলো না।
আমার সবসময়ের ভ্রমণসঙ্গী মাকে বললাম ছুটির কথা। মা বললেন, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ছুটি তো নিলে, কোথায় যাবি ছুটিতে। আমি বললাম ঠিক তো বলেছ, যাব কোথায় অনেক চিন্তা করে নতুন কোনো জায়গার সন্ধান পাচ্ছিলাম না। শেষমেশ মা-ই বললেন, সিলেটের মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে আমরা যেতে পারি। এখানে দেবী ৩০০ বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন। আমি বললাম ঠিক আছে, পলাশ ভাইকে বলে রাখছি, সোমবার আমরা শহরের বাইরে পূজা দেখতে যাব।
সেদিন সোমবার ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মার ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেল। এই ওঠ তাড়াতাড়ি, আজ আগে বের হতে হবে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের ভেতরে পৌঁছাতে হবে মন্দিরে। জলদি স্নান করে তৈরি হয়ে নিলাম। এবার অপেক্ষা পলাশ ভাইয়ের। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পলাশ ভাই এসে হাজির। আমরা শরতের স্নিগ্ধ সকালে বেরিয়ে পড়লাম। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে, এর মধ্যেই আমরা মহাসড়ক পেরিয়ে এগিয়ে চলছি। আমরা চলছি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে। অবশেষে আমরা পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। মূল মন্দির থেকে বেশ দূরে আমাদের নামতে হলো। ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে ১০টা। পদব্রজে হাজার হাজার মানুষের গন্তব্য দেবী মন্দিরের দিকে। আজ অষ্টমী তিথি, তাই মানুষের এত আনাগোনা। রাস্তার পাশে মেলা বসেছে নানা ধরনের দ্রব্যাদি নিয়ে। বই, ফার্নিচার, খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, খেলনা বিভিন্ন রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। শিশুদের খেলনা, মুড়ি-মুড়কি, নিত্য ব্যবহারের সবকিছুই নিয়ে বসেছে মেলায়। তবে মেলায় বড়দের থেকে শিশুদের ভিড়ই বেশি।