প্লাস্টিক পণ্য : ৫ বছরে রফতানি বেড়েছে ৪৯ শতাংশ

আনোয়ার হোসেন

অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর গত অর্থবছর (২০১৮-১৯) ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হয়েছে, যার মধ্যে পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে পরিচিত প্লাস্টিক বর্জ্য রফতানির পরিমাণ ছিল অন্তত শতকোটি টাকা। পাঁচ বছর আগের তুলনায় গত বছর প্লাস্টিক পণ্য খাতে রফতানি বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতের বাজার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে প্লাস্টিক শিল্পনগরী চালু, প্লাস্টিক পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো ও নগদ প্রণোদনা পেতে শর্তের বেড়াজাল দূর করতে হবে।

সমাপ্ত অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। সরাসরি রফতানির বাইরে বিভিন্ন খাতের মাধ্যমে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ৮০৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ খাতে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ শতাংশ। সরকারের নীতিসহায়তা পেলে ২০২১ সালের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি করে ৮ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে প্লাস্টিক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) ও রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, এ খাতে রফতানির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। গত অর্থবছর ২৯০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্লাস্টিক ব্যাগ রফতানি হয় ৩০৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার। অর্থাৎ রফতানির পরিমাণ ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৬২ এবং আগের বছরে তুলনায় ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। এছাড়া প্লাস্টিক আবর্জনা ও অন্যান্য প্লাস্টিক উপকরণ রফতানি হয় যথাক্রমে ১০৫ কোটি ১০ লাখ ও ৭৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার।

বিপিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫২ সালে প্লাস্টিক শিল্পের যাত্রা হয়। এ সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে এ শিল্প। পুরান ঢাকায় এ শিল্পের ঘনত্ব বাড়তে থাকে ১৯৬৫ সাল থেকে। পরে ১৯৮০-এর দশকে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে এ খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারিসহ মোট তিন হাজার প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে, যার অধিকাংশের অবস্থান পুরান ঢাকায়। এ খাতে প্রায় ১৩ লাখ শ্রমিক সরাসরি জড়িত। দেশে মোট ১৫ ক্যাটাগরির প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে পোশাক খাতের জন্য পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার ক্লিপ, বোতাম, খেলনাসামগ্রীর মধ্যে পুতুল, বল, ইয়োইয়ো; গৃহে ব্যবহারের জন্য চেয়ার, টেবিল, ডাইনিং টেবিল, বিভিন্ন ধরনের র্যাক, বাথটাব, জগ, মগ, ঝুড়ি; অফিসে ব্যবহারের জন্য পেপারওয়েট, স্কেল, টেবিল, বলপেন, ফাইল কভার ও কৃষি খাতের জন্য পাইপ অন্যতম। এছাড়া সাইকেলের বাম্পার, হাতলের কভার, ব্যাক লাইট, স্পোক লাইট, মাছ ও ডিম রাখার ঝুড়ি, ভিডিও ও অডিও ক্যাসেট, কম্পিউটারের উপকরণসহ প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরি হচ্ছে দেশেই। পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্যের বর্জ্য ও রিসাইক্লিং করে তার কাঁচামালও রফতানি করা হয়। তবে বড় বাজার চীনে ২০১৭ সালে প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে নতুন বাজার খুঁজছেন উদ্যোক্তারা।

প্লাস্টিকের সব ধরনের পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে দেশের বাজার বর্তমানে ২৫ হাজার কোটি টাকার। অন্যদিকে প্লাস্টিকের বৈশ্বিক বাজারের মূল্য ট্রিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের অবদান মাত্র দশমিক ৬ শতাংশ। এ খাতের উদ্যোক্তারা মনে করেন, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্লাস্টিক খাত বিশ্ববাজারের ৩ শতাংশ পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের সক্ষমতা অর্জন করবে।

এ শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে রফতানিতে দেয়া হচ্ছে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা। এছাড়া ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। মুন্সীগঞ্জে ১৩৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮-এর জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি না করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ প্রকল্পটির ব্যয় ৪৮২ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬১৫ কোটি টাকা ধরে প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সম্ভাবনাময় এ শিল্পের প্রতি সরকারের নজর দেয়া আবশ্যক জানিয়ে বিপিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট কেএম ইকবাল হোসাইন বলেন, প্রতি বছর রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকা এ শিল্পের জন্য প্লাস্টিক শিল্পনগরী তৈরির প্রস্তাব পাসের সাড়ে তিন বছর পরও অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। অথচ এ শিল্পের আরো এগিয়ে যাওয়া তথা রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য একটি পৃথক শিল্পনগরী স্থাপন অতীব জরুরি। এছাড়া নগদ প্রণোদনা পেতে শর্ত শিথিলের পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন