অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন কিছু অভিজ্ঞতা

ড. সৈয়দ বাশার

সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত আমি স্বনামধন্য একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। অদ্যাবধি নিজের জীবনবৃত্তান্তে আমার কখনো প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা লাভের বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়ে ওঠেনি। সুতরাং আগ্রহভরে এবং সন্তুষ্ট চিত্তে আমি পদটির দায়িত্ব নিতে রাজি হই। যদিও বিষয়টি আমি বিন্দুমাত্র উপলব্ধি করিনি যে এক্ষেত্রে আমাকে কী পরিমাণ দাপ্তরিক কাজের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। 

১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্ন থেকেই এর সঙ্গে আমার দীর্ঘ বোঝাপড়ার সম্পর্ক বিদ্যমান। স্নাতক শিক্ষার্থী হিসেবে শুরু, এরপর স্নাতক সম্পন্ন করে শিক্ষকের সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হই। দীর্ঘ ১৫ বছর অনুপস্থিতির পর আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করি। তাই বলা যায়, বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমকালো উত্থান পর্বটি আমার চোখের সামনেই ঘটেছে।

বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমি আমার অভিজ্ঞতা লেখার তাড়না অনুভব করছি। আমি আশা করছি, এতে অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আমার সহকর্মীরা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে খোলামেলাভাবে কথা বলতে উত্সাহিত হবেন। এখানে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বেছে নেয়া আটটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করছি

প্রথমত, শিক্ষার্থীদের প্রায়ই তাদের দুর্বল কর্মক্ষমতার জন্য দোষ দেয়া হয়। কিন্তু আমরা খুব কমই শিক্ষকদের তাদের পঠন-পাঠনের পদ্ধতির নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি। এখানে পরীক্ষা গ্রহণই (যেমন মধ্যবর্তী বা বার্ষিক পরীক্ষা) শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে চিহ্নিত। অনেক শিক্ষার্থীই প্রচলিত মুখস্থ বিদ্যানির্ভর পরীক্ষায় অসন্তোষজনক ফল অর্জন করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দক্ষতা মূল্যায়নের অন্যান্য পদ্ধতি, যেমন ক্লাস প্রেজেন্টেশন, ফিল্ড ট্রিপ-পরবর্তী স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ কিংবা দলের মধ্যে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা চমত্কার দক্ষতা প্রদর্শন করে। আমরা দেখেছি মূল্যায়ন পদ্ধতির একটি পোর্টফোলিও শিক্ষার্থীদের শেখার উদ্দীপনা জাগাতে চমত্কারভাবে কাজ করে।

দ্বিতীয়ত, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দ্রুত দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করে। যেমন বিনিময় হার বিষয়ে বক্তৃতা প্রদানের সময় পশ্চিমা পাঠ্যবইয়ের ডলার-ইয়েন কিংবা ডলার-পাউন্ডের উদাহরণ টানার বদলে ডলার-টাকা কিংবা রুপি-টাকার উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া ভালো। উন্নয়ন অর্থনীতির বইগুলো সাধারণত বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের প্রচলিত উদাহরণগুলো দিয়ে ভর্তি। কারণে শিক্ষার্থীদের জন্যও এটি সহজপাঠ্য। একইভাবে শিক্ষকদের স্থানীয় উদাহরণ সম্পর্কিত ধারণাগুলো তুলে ধরতে বাড়তি কাজ করতে হবে, বিশেষ করে যখনই প্রয়োজন পড়বে। তবে সব শিক্ষক এটা করেন না, কারণ এজন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা যোগের প্রয়োজন পড়ে।  

তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের নৈতিক দায় থাকা উচিত। এক-চতুর্থাংশেরও কম শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হয়। তবু পাঠ্যক্রমের একটি বড় অংশ পুরনো বিষয়বস্তু আর তত্ত্ব-সংবলিত থাকে বিধায় পরবর্তী সময়ে এটি চাকরির জন্য যে ধরনের দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন, তা শেখায় না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে এখানে উদ্যোগী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পাঠ্যসূচি উন্নত করার জন্য নেতৃত্ব দিতে হবে, যাতে সমাজ অর্থনীতির দ্বৈত উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব হয়।

চতুর্থত, আজকালকার শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার কর্তব্য সম্পর্কে অসচেতন মনে হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই প্রশ্ন করতে সংকোচ বোধ করে, এমনকি যেখানে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতাও নেই। কিছু শিক্ষার্থী আবার ক্লাস শেষ হওয়ার পর প্রশ্ন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং অন্য শিক্ষার্থীদের প্রশ্নটি থেকে শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। প্রশ্ন করার

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন