বিক্রয়োত্তর সেবার মানের ওপর নির্ভর করে ক্রেতার আস্থা, আনুগত্য ও ব্র্যান্ডের মূল্য। পাশাপাশি নতুন ক্রেতা আকর্ষণের ক্ষেত্রেও কোম্পানির বিক্রয়োত্তর সেবার ভাবমূর্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ কারণেই ভারতের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো এর ওপর গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেরামত করতে দেয়া চারটি ফোনের তিনটিই একদিনের মধ্যে ফেরত পান ব্যবহারকারী। এ সেবায় ভারতে সবচেয়ে এগিয়ে অপো। খবর কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চ।
প্রযুুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চ সম্প্রতি সেলফোন কোম্পানিগুলোর বিক্রয়োত্তর সেবা নিয়ে এ
গবেষণা করেছে। গবেষণার উদ্দেশ্যে ভারতের ছয়টি প্রধান শহরে অপো, স্যামসাং, শাওমি, ভিভো
ও অন্যান্য কোম্পানির সার্ভিস পয়েন্টগুলোয় জরিপ পরিচালনা করা হয়।
‘কনজিউমার লেন্স স্টাডি’ শীর্ষক এ গবেষণায় দেখা গেছে,
ভারতের স্মার্টফোন সার্ভিস সেন্টারগুলোতে
চারজনের তিনজনই ফোনটি মেরামতের পর একদিনের মধ্যে ফেরত পান। সেবাগ্রহীতারা আসেন
মূলত ডিসপ্লে, সফটওয়্যার, চার্জিং ও সাউন্ড সমস্যা নিয়ে। অবশ্য কাস্টমার সার্ভিসের মান নিয়ে
সেভাবে কোনো গবেষণা ভারতে কখনো হয়নি। এ গবেষণায়ও সে দুর্বলতা রয়েছে।
গবেষণার ব্যাপারে কাউন্টার পয়েন্টের
সহযোগী পরিচালক তরুণ পাঠক বলেন,
নতুন ফোন কেনায় ক্রেতাকে সিদ্ধান্ত নেয়ায়
প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়োত্তর সেবা খবুই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে। ভারতের স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো এখন তাদের বিক্রয় চ্যানেলে বৈচিত্র্য আনছে।
এখন বিক্রয়োত্তর সেবায়ও তারা জোর দিলে একজন ক্রেতাকে দ্বিতীয়বার ওই ব্র্যান্ড
কেনায় এবং সুখী ও অনুগত ক্রেতা পেতে আর বেগ পেতে হবে না।
তরুণ জানান, তাদের
গবেষণায় দেখা গেছে ভারতে বিক্রয়োত্তর সেবায় সব ব্র্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে আছে চীনা
ব্র্যান্ড অপো। এতে ভারতীয় ক্রেতাদের মধ্যে অপো সম্পর্কে খুবই ইতিবাচক ধারণা তৈরি
হচ্ছে।
দেখা গেছে, অপোর
সার্ভিস সেন্টারগুলো ৫১ শতাংশ ক্ষেত্রে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ফোন মেরামত করে
ব্যবহারকারীর কাছে ফেরত দেয়। মেরামতের জন্য সেলফোন জমা দেয়া এবং মেরামত শেষে
ফিরিয়ে নেয়া দুই ক্ষেত্রেই অপোতে সবচেয়ে কম সময় লাগে। প্রতি চারজন সেবাগ্রহীতার
মধ্যে তিনজনকেই আধা ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সমাধান পেতে দেখা গেছে। আর মেরামতের পর
সেটটি হাতে পেতে দুজনের মধ্যে একজনকে ৩০ মিনিটেরও কম সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সেলফোনের রেজল্যুশন ইস্যুকে কোনো
সার্ভিস সেন্টারের কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের একটি সূচক হিসেবে ধরা যায়। কারণ এ
সমস্যার দ্রুত সমাধান দিতে হলে সেন্টারের প্রকৌশলীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
সর্বশেষ সংস্করণের সেলফোনের হার্ডওয়্যার,
সফটওয়্যার সম্পর্কে হালনাগাদ রাখতে হয়। এদিক
থেকেও অপো বেশ এগিয়ে। অপোর সার্ভিস সেন্টারে আসা ৮৫ শতাংশ ব্যবহারকারীই তাদের
সমাধান পেয়েছেন। এদিক থেকে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শাওমি ও ভিভো।
জরিপে অংশ নেয়া ১০ জনে ছয়জন
সেবাগ্রহীতা বলেছেন, মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সার্ভিস সেন্টারেই পাওয়া যায়। কোনো
যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে আনাতে হলে ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে মাত্র তিন দিনের মধ্যে পাওয়া
গেছে।
এদিকে সেলফোনের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ
হয়ে গেলে সেটি মেরামতের খরচ অনেক বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর সন্তুষ্টি
নির্ভর করে সার্ভিস সেন্টারের আচরণ ও খরচের ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, সার্ভিস
সেন্টারে আনা ৩১ শতাংশ সেলফোনেরই ওয়ারেন্টি পিরিয়ড থাকে না। মেরামতের জন্য
প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের জন্য তখন ব্যবহারকারীকে ব্যয় বহন করতে হয়। তবে বেশির ভাগ
ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতা এ খরচ যৌক্তিক বলেই মন্তব্য করেছেন।
ভারতের মতো দেশে সেবার ক্ষেত্রে ভাষা
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিক থেকেও সবার চেয়ে এগিয়ে অপো। এ ব্র্যান্ডটির হটলাইন
কলসেন্টারে নয়টি ভাষায় সেবা মেলে। অথচ অন্য চারটি প্রধান ব্র্যান্ডের মধ্যে শাওমি
পাঁচটি, স্যামসাং চারটি এবং ভিভো দুটি ভাষায় সেবা দেয়।
এ ব্যাপারে কাউন্টার পয়েন্টের জ্যেষ্ঠ
বিশ্লেষক পাভেল নাইয়া বলেন,
ভারতের বাজারে প্রমোশনাল সার্ভিস যেমন বর্ধিত
ওয়ারেন্টি, সার্ভিস নিতে আসা ব্যবহারকারীকে স্মার্টফোন অ্যাকসেসরিজ উপহার দেয়া
ইত্যাদির মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। শাওমি সেদিক থেকে ক্রেতাদের বেশ
সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছে।
তবে ক্রেতার সন্তুষ্টি অনেকগুলো
বিষয়ের ওপর নির্ভর করে উল্লেখ করে পাভেল বলেন, এক্ষেত্রে সার্ভিস সেন্টারের স্টাফদের
আন্তঃযোগাযোগ দক্ষতা অপরিহার্য। ভিভোর সার্ভিস সেন্টারগুলোয় সেটি আছে বলে
জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা।